বুধবার, ১৩ মে, ২০১৫

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর শান

    ইমাম আবু হানিফা (রহ.) জীবদ্দশাতেই হিংসুকরা তাঁর বিরুদ্ধে আপবাদ রটাতো। সেই হিংসুকদের বংশধরেরা আজো জীবিত। তারা তাদের পূর্বপুরুষেরর অনুসরণ করছে............
    ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর শান-মান কত দেখুন-
    (লেখাটি আমাকে চমৎকৃত করেছে তাই কপি করলাম)
    মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ফিকহ শাস্ত্রের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ছিল না। এর প্রয়োজনও ছিল না। কেননা, তখন-যখনই কোন সমস্যার উদ্ভব হত, সাথে সাথে এ ব্যাপারে সরাসরি কোরআনের আয়াত নাজিল হত, নতুবা নবী করিম (দ.)-এর সমাধান দিয়ে দিতেন। পরবর্তীতে সাহাবা ও তাবেয়ীদের যুগে ইসলামের আলোক রশ্মি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। মুসলমানগণ বিভিন্ন জাতির সংস্পর্শে আসে। নতুন নতুন সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে তাদের পরিচয় ঘটে। মুসলমান সমাজে নূতন নূতন সমস্যা দানা বেধে ওঠে। যার সমাধান কোরআন মজিদ ও হাদীস শরীফে প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখ নেই। এমনি সময়ে শিয়া, খারেজী, রাফেজী, মু’তাযিলা ইত্যাদি বাতিল ফেরকার আবির্ভাব ঘটে। এমন এক বিপর্যয় কবলিত যুগ সন্ধিক্ষণে তাবেয়ীদের যুগের শেষের দিকে আহলে সুন্নাতের ওয়াল জামাতের অনুসারী আলেম সম্প্রদায় কোরআন-সুন্নাহর আলোকে এমন একটি সার্বজনীন আইন শাস্ত্র সম্পাদনায় হাত দেন, যা সকল স্থান, কাল ও পাত্রের জন্য প্রযোজ্য। এর পূর্ণাঙ্গ রূপই আজ ইলমে ফিকহ বা ইসলামী আইন শাস্ত্র (যা দিনিয়াত, আমলিয়াত, আখলিয়াত) এর সমষ্টি। ইমাম আবু হানিফা (রা.) সর্বাগ্রে এই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ফিকহ শাস্ত্রের যে সংকলিত ও সমন্বিত রূপ আজ আমাদের সামনে বিদ্যমান, তা ইমাম আবু হানিফা (রা.) ও তদীয় শিযাবৃন্দেরই অবদান। তিনি কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তিতে ১২ লক্ষ ৯০ হাজার মাসআলা উদ্ভাবন করেছেন। বিশ্ব মুসলিমের তিন চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠী ফিকহে হানাফির অনুসারী। অবশিষ্টরা ইমাম শাফেয়ী (রা.) ইমাম মালেক (রা.) ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রা.)-এর অনুসারী। উল্লেখিত চার ইমামের প্রবর্তিত চার মাযহাব একটি আরেকটির প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং একটি আরেকটির সম্পূরক ও পরিপূরক।
    আজকের আলোচনা যেহেতু ইমাম আজম আবু হানিফা (রা.) নিয়ে, তাই তাঁর সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা বাঞ্চনীয়। তিনি হিজরী ৮০ সালে কুফাতে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ হযরত সওতী (রা.) হযরত আলী (রা.) এর যুগে ইসলামে দীক্ষিত হন। তাঁর জন্মকালে অসংখ্য সাহাবী জীবিত ছিলেন। তিনি শীর্ষ স্থানীয় তাবেয়ী ছিলেন। হযরত আনাস (রা.)সহ কয়েকজন সাহাবীকে তিনি দেখেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি কোরআন হাদীসে অগাধ পা-িত্য অর্জন করেন। তাঁর অসাধারণ খ্যাতি ও যশ চারিদিক ছড়িয়ে পড়লে আব্বাসীয় খলিফা আস মনসুর তাঁকে রাষ্ট্রীয় প্রধান কাজীর পদ গ্রহণের প্রস্তাব দিলে তিনি দ্বিধাহীন চিত্তে উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। খলিফা মনসুর ১৪৪ হিজরীতে তাঁকে কারাগারে আবদ্ধ করেন। অতঃপর ১৫০ হিজরীতে গোপনে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে তাঁকে শহীদ করা হয়। বাগদাদের খায়েজরান নামক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
    ইলমে ফিকহ তথা ইসলামী আইন শাস্ত্রের উদ্ভাবক ইমাম আজম আবু হানিফা (রা.) এর বিশাল খেদমত সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে আহলে হাদীস নামধারী সালাফী তথা লা মাযহাবী গোষ্ঠী যুগে যুগে কম অপপ্রচার চালায়নি।
    ইমাম আযম আবু হানীফা (রা.) সম্পর্কে বর্তমানে আহলে হাদীস নামধারী সালাফীরা যেমন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মিডিয়া ও লেখনির মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে তৎকালীন যুগেও তাঁর বিরুদ্ধে অহেতুক, অমূলক ও অসত্য অপবাদ কম দেয়া হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে এক মহা অপবাদ এই ছিল যে, তিনি নাকি আল্লাহর রাসূল (দ.) এর হাদীস মানেন না। তিনি ইরাকের কুফা নগরীর আধিবাসী হলেও তাঁর বিরুদ্ধে গড়া অপবাদ তৎকালীন হেজায তথা মক্কা-মদীনা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। মক্কা-মদীনায় ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত মতামতকে হাদীসের উপর প্রাধান্য দেন। যুক্তি ও কিয়াসের বিপরীত হলে তিনি হাদীসকে পরিত্যাগ করেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তার মানে সহীহ হাদীস থাকলে সে বিষয়ে তিনি যুক্তি বা কেয়াসের কাছেও যান না। দু’জন আওলাদে রাসূলের সাথে ইমাম আবু হানিফা (রা.) এর ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকার থেকে তাঁর হাদীস অনুসরণ ও কিয়াস পরিত্যাগের স্বরূপ দিবালোকের মত স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।
    প্রথম ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ ইমাম বাকের (রা.)-এর সাথে
    একদা তিনি হজ্ব উপলক্ষে মক্কা মুকাররামায় পৌঁছলে সেখানে আওলাদে রাসূল (দ.) হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রা.) (যিনি হচ্ছেন জাইনুস সাজেদীন মজলুমে কারবালা হযরত ইমাম জাইনুল আবেদীন (রা.) এর পুত্র) তাঁকে দেখে অত্যন্ত কড়া ভাষায় জিজ্ঞেস করেন যে, তুমি তাহলে সেই ব্যক্তি, যে আমার দাদা (দ.) এর দ্বীনকে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে ফেলেছে? তুমি তাহলে সেই লোক যে, আমার দাদা (দ.) এর হাদীসের উপর কিয়াস তথা যুক্তিকে প্রাধান্য দাও? শুনে ইমাম আযম আবু হানিফা (রা.) বললেন, হে মহামান্য ইমাম! আমি তো এরকম কখনো করিনি! ইমাম বাকের (রা.) বললেন, তুমি তাই করেছ। ইমাম আবু হানীফা (রা.) বললেন, হে মহামান্য ইমাম! আপনি আপনার পছন্দসই উপযুক্ত জায়গায় বসেন আর আমিও আমার পছন্দসই উপযুক্ত জায়গায় বসব, তারপর আলোচনা করি। তখন হযরত ইমাম বাকের (রা.) পালঙ্ক জাতীয় এক আসনে আসীন হলে ইমাম আবু হানিফা (রা.) তাঁর সামনে নতজানু হয়ে মাটিতে বসে পড়েন এবং বললেন, হে মহান ইমাম! আপনার সামনে এভাবে বসার কারণ হলো, আমার কাছে আপনার পজিশন হলো সাহাবীদের সামনে আপনার দাদা (দ.) এর পজিশনের অনুরূপ। নিজের চিন্তাধারা স্পষ্ট করার আগে আওলাদে রাসূল (দ.) এর সাথে ইমাম আযম আবু হানীফা (রা.) এভাবেই ব্যবহার শুরু করলেন, যেন তাঁর আচরণেই স্পষ্ট হয়ে যায়, তিনি আল্লাহর রাসূল (দ.) এর দ্বীন পরিবর্তন করেননি।
    অতঃপর ইমাম আবু হানীফা (রা.) বললেন, হে মহামান্য ইমাম! আপনি বলেছেন আমি আপনার দাদার দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলেছি। কিয়াস ও যুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে আপনার দাদা (দ.) এর হাদীসকে পরিত্যাগ করেছি।
    ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রা.) বললেন, হ্যাঁ, শুনেছি, তুমি তাই করেছ।
    ইমাম আবু হানিফা (রা.) বললেন, যদি অনুমতি দেন আমি কি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করতে পারি?
    ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রা.): হ্যাঁ, করতে পার।
    ইমাম আবু হানীফা (রা.) এর প্রথম প্রশ্ন: পুরুষ দুর্বল নাকি নারী?
    ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রা.): আবশ্যই নারী দুর্বল।
    ইমাম আবু হানিফা (রা.): আপনার দাদা (দ.) এর দ্বীনে মীরাছ বা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের অর্ধেক দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। অথচ আমি যদি আপনার দাদা (দ.) এর হাদীসের উপর যুক্তিকে প্রাধান্য দিতাম তাহলে দুর্বল হওয়ার কারণে নারীকে বেশী দেয়ার জন্য বলতাম। কিন্তু আমি তা কখনো বলিনি। কারণ আপনার দাদা (দ.) এর হাদীস আমার কাছে যুক্তির উপর অগ্রাধিকার প্রাপ্ত।
    ইমাম আবু হানিফা (রা.) এর দ্বিতীয় প্রশ্ন: আল্লাহর কাছে নামাযের গুরুত্ব বেশী নাকি রোযার গুরুত্ব বেশী? ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রা.): অবশ্যই নামাযের গুরুত্ব বেশী।
    ইমাম আবু হানিফা (রা.): হে মহান ইমাম! রমজান মাসে ঋতু¯্রাবকালে মহিলারা নামায ও রোযা আদায় করতে পারে না। অথচ নামাযের গুরুত্ব বেশী হওয়া সত্ত্বেও আপনার দাদা (দ.)-এর নির্দেশ হচ্ছে পরবর্তীতে রোযা কাযা করতে হবে নামায নয়। এখন আমি যদি আপনার দাদা (দ.)-এর হাদীসের উপর যুক্তিকে প্রাধান্য দিতাম তাহলে মহিলাদেরকে রোযা বাদ দিয়ে নামায কাযা করার জন্য বলতাম। কিন্তু আমি তা’ করিনি। ইমাম আবু হানিফা (রা.) এর তৃতীয় প্রশ্ন: হে মহান ইমাম! কোনটা বেশী অপবিত্র? প্রশ্রাব নাকি বীর্য?
    ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রা.): আমার দাদা (দ.) এর দ্বীনে প্রশ্রাবই অধিক অপবিত্র।
    ইমাম আবু হানিফা (রা.): হে মহান ইমাম! আমি যদি হাদীস ছেড়ে যুক্তিকে প্রাধান্য দিতাম তাহলে বেশী পরিমাণ অপবিত্র হওয়ার কারণে প্রশ্রাব করার পরে গোসল করতে বলতাম, আর কম অপবিত্র হওয়ার কারণে বীর্য বের হলে ওযু করার কথা বলতাম। কিন্তু আমি যুক্তিকে পরিত্যাগ করে আপনার দাদা (দ.) এর হাদীস অনুযায়ী প্রশ্রাব করলে ওযু আর বীর্য বের হলে গোসল করার কথাই বলি। যেহেতু আমি আপনার দাদা (দ.)-এর হাদীসকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। হে ইমাম! আমি যুক্তি ও কিয়াস দ্বারা দ্বীনকে পরিবর্তন করিনি। হে মহান ইমাম! আমি যা করার তাই করেছি। মূলত ইরাকবাসীরা দিন দিন নতুন সমস্যায় পতিত হয় আর আমি তাদেরকে আপনার দাদা (দ.) এর দ্বীনের উপর পরিচালিত কতে সচেষ্ট থাকি। তাঁর এই কথা শুনে ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রা.) দাঁড়িয়ে ইমাম আবু হানিফা (রা.)কে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং কপালে চুমু দেন......
    সাথে একটি ভিডিও দিলাম। আরবদের মুখেই শুনুন আবু হানিফা ও হানাফী মজহাবের মহত্ব সম্পর্কে-
    https://m.youtube.com/watch?v=B-5ZgfbbmF4
  • Taru Bhuiyan এই ভিডিও ভাষ্যকার কে? #ইলমের ত্বালিব ভাই।
    11 hrs · Like · 1
  • Golam Azam Du আপনাকে অনেক ধন্যবাদ অল্প কথায় অনেক তথ্য দেয়ার জন্য|
    11 hrs · Like · 1
  • Faruk Hossen ভাই সমস্য হলো ইমামের ফতুয়া যেটা পেটের জন্য দরকার সেটা মানি,
  • Habib Mahbub এই খবিছ ঠাকুর আছে ।এই ঠাকুর ইমামদের ব্যাপারে বিরোপ মন্তব্য করে ।
    এই জাকির কুকুর ভারতের কুকুর
    2 hrs · Unlike · 1
  • Faruk Hossen যারা অন্য কে গালি দিয়ে ইসলাম প্রচার করতে চায় তারা আসলে ইসলামের কেউ না
    1 hr · Unlike · 2

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন