নারী পুরুষের নামায এক না ভিন্ন ?
আপনি জানেন কি কথিত আহলে হাদীসরা উম্মাতে মুসলিমার মাঝে বিভেদ করে এবার হাদীসের মাঝেও বিভেদ করছে???
তথাকথিত আহলে হাদীসরা উম্মাতে মুসলিমার মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে এবার হাদীসের মাঝেও বিভেদ সৃষ্টি করতে উঠেপড়ে লেগেছে।এর অনেক প্রমাণই আছে।আমি শুধু বুখারী শরীফ থেকে একটি প্রমাণ পেশ করবো।হাদীস নং ৬০৩।এটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নাম্বার।হাদীসটির একটি অংশকে অন্য অংশ থেকে পৃথক করে ফেলছে।পৃথককৃত অংশটি হল صلواكمارايتموني اصليঅর্থ:তোমরা আমাকে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে।" তারা এটি দিয়ে দলীল দিয়ে বলে নারী-পুরুষের নামায এক ও অভিন্ন।কিন্তু এর পরের অংশ فاذا حضرت الصلاة فليؤذن لكم احدكم وليؤمكم اكبركم অর্থ:"আর যখন নামাযের সময় হবে তখন যেন তোমাদের একজন আযান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে যেন তোমাদের ইমামতি করে।"
পরবর্তী দু অংশেও আগের মতই নারী-পুরুষ পার্থক্য না করে হুকুম করা হয়েছে।অথচ তারা আগের অংশকে পরের অংশের মাঝে বিভেদ ও পার্থক্য সৃষ্টি করে বলে নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতি অভিন্ন।আর দ্বিতীয় অংশের ক্ষেত্রে বলে নারীরা আযান দিতে ও ইমামতি করতে পারবেনা।এটি কি হাদীসের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি নয়??
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- হাদীস ১: قال الامام ابو داود في كتابه المراسيل له.وهو جزء من سننه.انبأ ابن وهب.انبأ حيوة بن شريح.عن سالم بن غيلان.عن يزيد بن ابي حبيب ان رسول الله صلى الله عليه وسلم مر على امرأتين تصليان.فقال اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الارض.فان المرأة ليست في ذلك كالرجل.(سكت عنه ابو داود فهو عنده صالح.وهو مرسل جيد.عضده ما في هذا الباب من موصول وآثار واجماع وصرح الشيخ ناصر الدين البانى في سلسلة الاحاديث الضعيفة انه لا علة فيه سوى الارسال)তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব রহঃ বলেন,একবার রাসূল সাঃ নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।তখন তাদের বললেন,যখন সিজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবেবে।কেননা মহিলারা এক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। (কিতাবুল মারাসীল,ইমাম আবু দাউদ ৫৫,হাদীস ৮০)। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস নওয়া সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ "আওনুল বারী" (১/৫২০)তে লিখেছেন, উল্লিখিত হাদীসটি সকল ইমামের উসূল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য। মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী 'সুবুলুস সালাম শরহু বুলুগিল মারাম' গ্রন্থে (১/৩৫১,৩৫২)এই হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সিজদার পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। চলবে ইনশাআল্লাহ.....
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- হাদীস ৩: قال الطبراني:حدثنا محمد بن عبد الله الحضرمي.قال:حدثتني ميمونة بنت حجر بن عبد الجبار بن وائل بن حجر.عن ابيها عبد الجبار.عن علقمة عمها.عن وائل بن حجر.قال:جئت النبي صلى الله عليه وسلم فقال:فساق الحديث.وفيه:يا وائل بن حجر!اذا صليت فاجعل يديك حذاء اذنيك.والمرأة تجعل يدها حذاء ثدييها. (رواه الطبراني في الكبير .ج٢٢ص١٩-٢٠.قال الهيثمي في مجمع الزوائد ج٢ص٢٧٢:رواه الطبراني في حديث طويل في مناقب وائل من طريق ميمونة بنت حجر.عن عمتها ام يحيى بنت عبد الجبار.ولم اعرفها.وبقية رجاله ثقات. قال الراقم:وفي الاسناد تعريف كاشف عن هذه المرأة.وهي من اتباع التابعين ان لم تكن تابعية.والمستور من هذه الطبقة محتج به على الصحيح.لا سيما ولحديثها هذا شواهد من الاصول والآثار) হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রাঃ বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হলাম,তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও)বললেন,হে ওয়াইল ইবনে হুজর!যখন তুমি নামাজ শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে।আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আল মু'জামুল কাবীর,তাবারানী ২২/২৭২) এই হাদীসটিও হাসান। চলবে ইনশাআল্লাহ....
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- আছারে সাহাবা ১: عن ابي اسحاق عن الحارث عن علي.قال:اذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها.(رواه عبد الرزاق في المصنف.واللفظ له.وابن ابي شيبة في المصنف ايضا.واسناده جيد.والصواب في الحارث هو التوثيق) হযরত আলী রাঃ বলেছেন,মহিলা যখন সিজদা করবে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সিজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। (আল মুসান্নাফ,আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৮,অনুচ্ছেদ:মহিলার তাকবীর,কিয়াম,রুকু ও সিজদা;আল মুসান্নাফ,ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৮;সুনানে কুবরা,বায়হাকী ২/২২২) আছারে সাহাবা:২ حدثنا ابو عبد الرحمن المقرئ.عن سعيد بن(ابي)ايوب.عن زيد بن (ابي)حبيب.عن بكير بن عبد الله بن الاشج.عن ابن عباس انه سئل عن صلاة المرأة.فقال:تجتمع وتختفز.(رواه ابن ابي شيبة.ورجاله ثقات) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে,মহিলারা কীভাবে নামায আদায় করবে?তিনি বললেন,খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে।(আল মুসান্নাফ,ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২) চলবে ইনশাআল্লাহ....
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- আকওয়ালুত তাবিঈন:- ১:আতা ইবনে আবী রাবাহ রহঃ (ক)ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ বলেন:- قال هشيم:اخبرنا شيخ لنا قال:سمعت عطاء سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة؟قا:حذو ثدييها.(مصنف ابن ابي شيبة.١/٢٧٠) হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল,নামাজে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে?তিনি বললেন বুক বরাবর।(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,১/২৭০) (খ) ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ আরো বর্ণনা করেন- عن ابن جريج قال:قلت لعطاء:تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل؟قال:لا ترفع بذلك يديها كالرجل.واشار فخفض يديه جدا.جمعهما اليه جدا.وقال:ان المرأة هيئة ليست للرجل وان تركت ذلك فلا حرج.(المصنف ١/٢٧٠) ইবনে জুরাইজ রহঃ বলেন,আমি আতা ইবনে আবী রাবাহ রহঃ কে জিজ্ঞেস করলাম,মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে?তিনি বললেন,মহিলা পুরুষের মত হাত উঠাবে না।এরপর তিনি(মহিলাদের হাত তোলার ভঙ্গি দেখালেন এবং)তাঁর উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথে খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন,মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন।তবে এমন না করলেও কোন অসুবিধা নেই।(আলমুসান্নাফ,১/২৭০)। আকওয়ালুত তাবিঈন:- ২:মুজাহিদ ইবনে জাবর রহঃ ইবনে আবী শায়বা রহঃ বর্ণনা করেন- عن مجاهد بن جبر انه كان يكره ان يضع الرجل بطنه على فخذيه اذا سجد كما تضع المرأة.(المصنف.١/٣٠٢) হযরত মুজাহিদ ইবনে জাবর রহঃ পুরুষদের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নিফে ইবনে আবী শাইবা,পরিচ্ছেদ:মহিলা কীভাবে সেজদায় থাকবে?১/৩০২)। চলবে ইনশাআল্লাহ....
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- আকওয়ালুত তাবিঈন: ৩.ইবনে শিহাব যুহরী রহঃ ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন- عن الزهري قال:ترفع يديها حذو منكبيها(المصنف لابن ابي شيبة.١/٢٧٩) যুহরী রহঃ বলেন,মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে।(ইবনে আবী শায়বা,১/২৭০)। ৪.হযরত হাসান বসরী রহঃ ৫.কাতাদাহ ইবনে দিআমা রহঃ আব্দুর রাযযাক ও ইবনে আবী শাইবা বর্ণনা করেন- عن الحسن وقتادة قالا:اذا سجدت المرأة فانها تنضم مااستطاعت ولاتتجافي لكي لا ترفع عجيزتها.(عبد الرزاق.٣/١٣٧؛ابن ابي شيبة.١/٣٠٣) হযরত হাসান বসরী ও হযরত কাতাদাহ রহঃ বলেন,মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে।অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দেবে না;যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে।(মুসান্নিফে আব্দুর রাযযাক,৩/১৩৭;ইবনে আবী শাইবা,১/৩০৩)। ৬.হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ (ক)ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন- عن ابراهيم اذا سجدت المرأة فلتضم فخذيها ولتضع بطنها عليهما.(المصنف لابن ابي شيبة.١/٣٠٢) ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ বলেন,মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে।(ইবনে আবী শাইবা,১/৩০২)। (খ)আব্দুর রাযযাক রহঃ বর্ণনা করেন- عن ابراهيم النخعي قال:كانت تؤمر المرأة ان تضع ذراعهاوبطنها على فخذيها اذا سجدت.ولا تتجافى كما تتجافى الرجل.لكي لا ترفع عجيزتها.(المصنف لعبد الرزاق.٣/١٣٧) হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ আরো বলেন,মহিলাদেরকে হুকুম করা হত সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখতে,পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখতে;যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে।(আব্দুর রাযযাক,৩/১৩৭)। ৭.খালেদ ইবনে লাজলাজ রহঃ ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন- عن خالد بن اللجلاج قال:كن النساء يؤمرن ان يتربعن اذا جلسن في الصلاة.ولا يجلسن جلوس الرجال على اوراكهن يتقي ذلك على المرأة مخافة ان يكون منها الشيء.(المصنف لابن ابي شيبة.١/٣٠٣) হযরত খালেদ ইবনে লাজলাজ রহঃ বলেন,মহিলাদেরকে হুকুম করা হত যেন তারা নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের ওপর বসে।পুরুষদের মত যেন না বসে।আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়।(ইবনে আবী শাইবা,১/৩০৩)। চলবে ইনশাআল্লাহ...
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- ১.ফিকহে হানাফী: ১.১.ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অন্যতম প্রধান শিষ্য ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ বলেন- احب الينا ان تجمع رجليها في جانب ولا تنتصب انتصاب الرجل(كتاب الآثار للامام محمد رحمه الله.١/٦٠٩) আমাদের নিকট মহিলাদের নামাযে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হল উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে,পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা।(কিতাবুল আসার,১/৬০৯) ১.২.মুহাদ্দিস আবুল ওয়াফা আফগানী রহঃ কিতাবুল আসার এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন-يروى امامنا الاعظم عن نافع عن ابن عمر رضى الله عنهما انه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم.قال:كن يتربعن ثم امرن ان يحتفزن. اخرجه ابو محمد الحارثي والاشنانى وابن خسرو من طريقه عن سفيان الثوري عنه.(راجع جامع المسانيد ج١ص٤٠٠) وهذا اقوي واحسن ما روي في هذا الباب.ولذا احتج به امامنا وجعله مذهبه واخذ به. আমাদের ইমামে আযম আবু হানীফা রহঃ নাফে রহঃ থেকে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন,হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে মহিলারা কীভাবে নামায পড়তেন?তিনি বললেন,আগে তারা চারজানু হয়ে বসতেন,পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে।(জামিউল মাসানীদ,১/৪০০)। উক্ত হাদীসটি এ বিষয়ে সর্বাধিক শক্তিশালী।এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন,এ অনুযায়ী আমল করেছেন এবং এটিকে মাযহাব বানিয়ে নিয়েছেন।(কিতাবুল আসার [টীকা]১/৬০৭) ১.৩.ইমাম আবুল হাসান কারখী হানাফী রহঃ ও তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'আল মুখতাসার' এ মহিলাদের নামাজের পার্থক্য বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম আবুল হুসাইন আল কুদূরী আল হানাফী রহঃ তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থে(১০১-১০২ পান্ডুলিপি)আরো বিস্তারিতভাবে দলীলসহ লিখেছেন। (বিস্তারিত দেখুন:কিতাবুল আসারের টীকা,১/৬০৯)। ১.৪.আল্লামা আব্দুল হাই লাখনোভী হানাফী রহঃ বলেন- وهذا كله في حق الرجال.واما في حق النساء فاتفقو على ان السنة لهن وضع اليدين على الصدر.لانه استر لهن... وفي المضمرات ناقلا عن الطحاوي:المرأة تضع يديها على صدرها لان ذلك استر لها. মহিলাদের ব্যাপারে সকলে একমত যে,তাদের জন্য সুন্নাহ হল বুকের উপর হাত বাঁধা।কারণ এটাই তাদের জন্য যথোপযুক্ত সতর।(আস-সিআয়া:২/১৫৬) আরো দেখুন:(ক)হিদায়া ১/১০০,১১০,১১১(খ)বাদায়িউস সানায়ে,১/৪৬৬;(গ)আল মাবসূত,১/২৫;(ঘ)ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৫০৪;(ঙ)ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১/৭৩,৭৫। চলবে ইনশাআল্লাহ...
আপনি জানেন কি কথিত আহলে হাদীসরা উম্মাতে মুসলিমার মাঝে বিভেদ করে এবার হাদীসের মাঝেও বিভেদ করছে???
তথাকথিত আহলে হাদীসরা উম্মাতে মুসলিমার মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে এবার হাদীসের মাঝেও বিভেদ সৃষ্টি করতে উঠেপড়ে লেগেছে।এর অনেক প্রমাণই আছে।আমি শুধু বুখারী শরীফ থেকে একটি প্রমাণ পেশ করবো।হাদীস নং ৬০৩।এটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নাম্বার।হাদীসটির একটি অংশকে অন্য অংশ থেকে পৃথক করে ফেলছে।পৃথককৃত অংশটি হল صلواكمارايتموني اصليঅর্থ:তোমরা আমাকে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে।" তারা এটি দিয়ে দলীল দিয়ে বলে নারী-পুরুষের নামায এক ও অভিন্ন।কিন্তু এর পরের অংশ فاذا حضرت الصلاة فليؤذن لكم احدكم وليؤمكم اكبركم অর্থ:"আর যখন নামাযের সময় হবে তখন যেন তোমাদের একজন আযান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে যেন তোমাদের ইমামতি করে।"
পরবর্তী দু অংশেও আগের মতই নারী-পুরুষ পার্থক্য না করে হুকুম করা হয়েছে।অথচ তারা আগের অংশকে পরের অংশের মাঝে বিভেদ ও পার্থক্য সৃষ্টি করে বলে নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতি অভিন্ন।আর দ্বিতীয় অংশের ক্ষেত্রে বলে নারীরা আযান দিতে ও ইমামতি করতে পারবেনা।এটি কি হাদীসের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি নয়??
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- হাদীস ১: قال الامام ابو داود في كتابه المراسيل له.وهو جزء من سننه.انبأ ابن وهب.انبأ حيوة بن شريح.عن سالم بن غيلان.عن يزيد بن ابي حبيب ان رسول الله صلى الله عليه وسلم مر على امرأتين تصليان.فقال اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الارض.فان المرأة ليست في ذلك كالرجل.(سكت عنه ابو داود فهو عنده صالح.وهو مرسل جيد.عضده ما في هذا الباب من موصول وآثار واجماع وصرح الشيخ ناصر الدين البانى في سلسلة الاحاديث الضعيفة انه لا علة فيه سوى الارسال)তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব রহঃ বলেন,একবার রাসূল সাঃ নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।তখন তাদের বললেন,যখন সিজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবেবে।কেননা মহিলারা এক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। (কিতাবুল মারাসীল,ইমাম আবু দাউদ ৫৫,হাদীস ৮০)। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস নওয়া সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ "আওনুল বারী" (১/৫২০)তে লিখেছেন, উল্লিখিত হাদীসটি সকল ইমামের উসূল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য। মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী 'সুবুলুস সালাম শরহু বুলুগিল মারাম' গ্রন্থে (১/৩৫১,৩৫২)এই হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সিজদার পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। চলবে ইনশাআল্লাহ.....
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- হাদীস ৩: قال الطبراني:حدثنا محمد بن عبد الله الحضرمي.قال:حدثتني ميمونة بنت حجر بن عبد الجبار بن وائل بن حجر.عن ابيها عبد الجبار.عن علقمة عمها.عن وائل بن حجر.قال:جئت النبي صلى الله عليه وسلم فقال:فساق الحديث.وفيه:يا وائل بن حجر!اذا صليت فاجعل يديك حذاء اذنيك.والمرأة تجعل يدها حذاء ثدييها. (رواه الطبراني في الكبير .ج٢٢ص١٩-٢٠.قال الهيثمي في مجمع الزوائد ج٢ص٢٧٢:رواه الطبراني في حديث طويل في مناقب وائل من طريق ميمونة بنت حجر.عن عمتها ام يحيى بنت عبد الجبار.ولم اعرفها.وبقية رجاله ثقات. قال الراقم:وفي الاسناد تعريف كاشف عن هذه المرأة.وهي من اتباع التابعين ان لم تكن تابعية.والمستور من هذه الطبقة محتج به على الصحيح.لا سيما ولحديثها هذا شواهد من الاصول والآثار) হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রাঃ বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হলাম,তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও)বললেন,হে ওয়াইল ইবনে হুজর!যখন তুমি নামাজ শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে।আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আল মু'জামুল কাবীর,তাবারানী ২২/২৭২) এই হাদীসটিও হাসান। চলবে ইনশাআল্লাহ....
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- আছারে সাহাবা ১: عن ابي اسحاق عن الحارث عن علي.قال:اذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها.(رواه عبد الرزاق في المصنف.واللفظ له.وابن ابي شيبة في المصنف ايضا.واسناده جيد.والصواب في الحارث هو التوثيق) হযরত আলী রাঃ বলেছেন,মহিলা যখন সিজদা করবে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সিজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। (আল মুসান্নাফ,আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৮,অনুচ্ছেদ:মহিলার তাকবীর,কিয়াম,রুকু ও সিজদা;আল মুসান্নাফ,ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৮;সুনানে কুবরা,বায়হাকী ২/২২২) আছারে সাহাবা:২ حدثنا ابو عبد الرحمن المقرئ.عن سعيد بن(ابي)ايوب.عن زيد بن (ابي)حبيب.عن بكير بن عبد الله بن الاشج.عن ابن عباس انه سئل عن صلاة المرأة.فقال:تجتمع وتختفز.(رواه ابن ابي شيبة.ورجاله ثقات) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে,মহিলারা কীভাবে নামায আদায় করবে?তিনি বললেন,খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে।(আল মুসান্নাফ,ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২) চলবে ইনশাআল্লাহ....
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- আকওয়ালুত তাবিঈন:- ১:আতা ইবনে আবী রাবাহ রহঃ (ক)ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ বলেন:- قال هشيم:اخبرنا شيخ لنا قال:سمعت عطاء سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة؟قا:حذو ثدييها.(مصنف ابن ابي شيبة.١/٢٧٠) হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল,নামাজে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে?তিনি বললেন বুক বরাবর।(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,১/২৭০) (খ) ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ আরো বর্ণনা করেন- عن ابن جريج قال:قلت لعطاء:تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل؟قال:لا ترفع بذلك يديها كالرجل.واشار فخفض يديه جدا.جمعهما اليه جدا.وقال:ان المرأة هيئة ليست للرجل وان تركت ذلك فلا حرج.(المصنف ١/٢٧٠) ইবনে জুরাইজ রহঃ বলেন,আমি আতা ইবনে আবী রাবাহ রহঃ কে জিজ্ঞেস করলাম,মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে?তিনি বললেন,মহিলা পুরুষের মত হাত উঠাবে না।এরপর তিনি(মহিলাদের হাত তোলার ভঙ্গি দেখালেন এবং)তাঁর উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথে খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন,মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন।তবে এমন না করলেও কোন অসুবিধা নেই।(আলমুসান্নাফ,১/২৭০)। আকওয়ালুত তাবিঈন:- ২:মুজাহিদ ইবনে জাবর রহঃ ইবনে আবী শায়বা রহঃ বর্ণনা করেন- عن مجاهد بن جبر انه كان يكره ان يضع الرجل بطنه على فخذيه اذا سجد كما تضع المرأة.(المصنف.١/٣٠٢) হযরত মুজাহিদ ইবনে জাবর রহঃ পুরুষদের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নিফে ইবনে আবী শাইবা,পরিচ্ছেদ:মহিলা কীভাবে সেজদায় থাকবে?১/৩০২)। চলবে ইনশাআল্লাহ....
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- আকওয়ালুত তাবিঈন: ৩.ইবনে শিহাব যুহরী রহঃ ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন- عن الزهري قال:ترفع يديها حذو منكبيها(المصنف لابن ابي شيبة.١/٢٧٩) যুহরী রহঃ বলেন,মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে।(ইবনে আবী শায়বা,১/২৭০)। ৪.হযরত হাসান বসরী রহঃ ৫.কাতাদাহ ইবনে দিআমা রহঃ আব্দুর রাযযাক ও ইবনে আবী শাইবা বর্ণনা করেন- عن الحسن وقتادة قالا:اذا سجدت المرأة فانها تنضم مااستطاعت ولاتتجافي لكي لا ترفع عجيزتها.(عبد الرزاق.٣/١٣٧؛ابن ابي شيبة.١/٣٠٣) হযরত হাসান বসরী ও হযরত কাতাদাহ রহঃ বলেন,মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে।অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দেবে না;যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে।(মুসান্নিফে আব্দুর রাযযাক,৩/১৩৭;ইবনে আবী শাইবা,১/৩০৩)। ৬.হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ (ক)ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন- عن ابراهيم اذا سجدت المرأة فلتضم فخذيها ولتضع بطنها عليهما.(المصنف لابن ابي شيبة.١/٣٠٢) ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ বলেন,মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে।(ইবনে আবী শাইবা,১/৩০২)। (খ)আব্দুর রাযযাক রহঃ বর্ণনা করেন- عن ابراهيم النخعي قال:كانت تؤمر المرأة ان تضع ذراعهاوبطنها على فخذيها اذا سجدت.ولا تتجافى كما تتجافى الرجل.لكي لا ترفع عجيزتها.(المصنف لعبد الرزاق.٣/١٣٧) হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ আরো বলেন,মহিলাদেরকে হুকুম করা হত সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখতে,পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখতে;যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে।(আব্দুর রাযযাক,৩/১৩৭)। ৭.খালেদ ইবনে লাজলাজ রহঃ ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন- عن خالد بن اللجلاج قال:كن النساء يؤمرن ان يتربعن اذا جلسن في الصلاة.ولا يجلسن جلوس الرجال على اوراكهن يتقي ذلك على المرأة مخافة ان يكون منها الشيء.(المصنف لابن ابي شيبة.١/٣٠٣) হযরত খালেদ ইবনে লাজলাজ রহঃ বলেন,মহিলাদেরকে হুকুম করা হত যেন তারা নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের ওপর বসে।পুরুষদের মত যেন না বসে।আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়।(ইবনে আবী শাইবা,১/৩০৩)। চলবে ইনশাআল্লাহ...
--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- ১.ফিকহে হানাফী: ১.১.ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অন্যতম প্রধান শিষ্য ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ বলেন- احب الينا ان تجمع رجليها في جانب ولا تنتصب انتصاب الرجل(كتاب الآثار للامام محمد رحمه الله.١/٦٠٩) আমাদের নিকট মহিলাদের নামাযে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হল উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে,পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা।(কিতাবুল আসার,১/৬০৯) ১.২.মুহাদ্দিস আবুল ওয়াফা আফগানী রহঃ কিতাবুল আসার এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন-يروى امامنا الاعظم عن نافع عن ابن عمر رضى الله عنهما انه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم.قال:كن يتربعن ثم امرن ان يحتفزن. اخرجه ابو محمد الحارثي والاشنانى وابن خسرو من طريقه عن سفيان الثوري عنه.(راجع جامع المسانيد ج١ص٤٠٠) وهذا اقوي واحسن ما روي في هذا الباب.ولذا احتج به امامنا وجعله مذهبه واخذ به. আমাদের ইমামে আযম আবু হানীফা রহঃ নাফে রহঃ থেকে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন,হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে মহিলারা কীভাবে নামায পড়তেন?তিনি বললেন,আগে তারা চারজানু হয়ে বসতেন,পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে।(জামিউল মাসানীদ,১/৪০০)। উক্ত হাদীসটি এ বিষয়ে সর্বাধিক শক্তিশালী।এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন,এ অনুযায়ী আমল করেছেন এবং এটিকে মাযহাব বানিয়ে নিয়েছেন।(কিতাবুল আসার [টীকা]১/৬০৭) ১.৩.ইমাম আবুল হাসান কারখী হানাফী রহঃ ও তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'আল মুখতাসার' এ মহিলাদের নামাজের পার্থক্য বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম আবুল হুসাইন আল কুদূরী আল হানাফী রহঃ তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থে(১০১-১০২ পান্ডুলিপি)আরো বিস্তারিতভাবে দলীলসহ লিখেছেন। (বিস্তারিত দেখুন:কিতাবুল আসারের টীকা,১/৬০৯)। ১.৪.আল্লামা আব্দুল হাই লাখনোভী হানাফী রহঃ বলেন- وهذا كله في حق الرجال.واما في حق النساء فاتفقو على ان السنة لهن وضع اليدين على الصدر.لانه استر لهن... وفي المضمرات ناقلا عن الطحاوي:المرأة تضع يديها على صدرها لان ذلك استر لها. মহিলাদের ব্যাপারে সকলে একমত যে,তাদের জন্য সুন্নাহ হল বুকের উপর হাত বাঁধা।কারণ এটাই তাদের জন্য যথোপযুক্ত সতর।(আস-সিআয়া:২/১৫৬) আরো দেখুন:(ক)হিদায়া ১/১০০,১১০,১১১(খ)বাদায়িউস সানায়ে,১/৪৬৬;(গ)আল মাবসূত,১/২৫;(ঘ)ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৫০৪;(ঙ)ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১/৭৩,৭৫। চলবে ইনশাআল্লাহ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন