বুধবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

লা-মাযহাবী, ওয়াহাবীদের প্রতিষ্ঠাতা গুরু মুহাম্মদ বিন আব্দিল ওয়াহাব নজদীর ব্রিটিশ এজেন্ট হওয়ার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনীঃ (পর্ব ৩)

মুহাম্মদ বিন আব্দিল ওয়াহাব নজদী
লা-মাযহাবী, ওয়াহাবীদের প্রতিষ্ঠাতা গুরু মুহাম্মদ বিন আব্দিল ওয়াহাব নজদীর ব্রিটিশ এজেন্ট হওয়ার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনীঃ (পর্ব ৩)

 
পর্ব- তিন
--------------------------------------

চার মাযহাব-
গুপ্তচর হেম্পার বলছে,
তাদের নবীর মৃত্যুর এক শতাব্দী পর সুন্নী মুসলিমদের চারজন স্কলার এ ব্যাপারে এগিয়ে এসেছিলেন। তারা ছিলেন, আবু হানিফা, আহমাদ বিন হাম্বাল, মালিক বিন আনাস, এবং মুহাম্মাদ বিন ইদ্রীস আশ শাফেয়ী। কয়েকজন খলীফা সুন্নীদেরকে চার স্কলারের যে কোন একজনকে অনুসরণ করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, এ চারজন স্কলার ছাড়া আর কেউ কোর'আন ও সুন্নাহ নিয়ে ইজতিহাদ করার যোগ্যতা রাখেন না। এই আন্দোলন মুসলমানদের জ্ঞান অর্জনের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। ইজতিহাদের উপর এমন নিষেধাজ্ঞাই মুলত ইসলামের অগ্রযাত্রাকে বন্ধ করে দিয়েছিল।
শিয়ারা সুন্নীদের এ বিষয়টিকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করে চেষ্টা করেছিল নিজেদের ফেরকাকে আরও অধিকভাবে পরিচিত করে তোলার। সংখ্যার দিক বিচারে শিয়ারা সুন্নীদের দশ ভাগের এক ভাগ থেকেও কম ছিল। কিন্তু এখন তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে,এমন কি তারা সুন্নীদের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে।
ইজতিহাদ হচ্ছে অস্ত্রের ন্যায়। এটা কোর'আন ও সুন্নাহ কে বুঝার ক্ষেত্রে জ্ঞানের গভীর থেকে গভীরে পৌছতে সহায়তা করে। অপরদিকে, ইজতিহাদ নিসিদ্ধকরণ হচ্ছে মরচে ধরা অস্ত্রের ন্যায়। এ ধরণের উদ্যোগ মাযহাবকে একটি ফ্রেইম ওয়ার্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলে।
আর হাঁ, যদি তোমার অস্ত্র দুর্বল হয়ে যায়, সন্দেহ নেই, তোমার দুশমন শক্তিশালী হয়ে যাবে। খুব শীঘ্রই অথবা অদূর ভবিষ্যতে দুশমনের মার খাবে।
আমি মনে করি, সুন্নীদের কেউ একজন হয়ত ভবিষ্যতে ইজতিহাদে দোয়ার খুলে দেবে। যদি তারা এটা না করে থাকে, তবে কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই শিয়ারা সংখ্যায় সুন্নীদের ছাড়িয়ে অনেক দূর চলে যাবে।
অহংকারী যুবক মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদী কোর'আন হাদীসের ব্যখ্যায় আপন প্রবৃত্তির অনুসরণ করতো। ঊলামাদের মতামতকে সে সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে চলত। শুধু উলামাদের মতামত ই নয়, বরং সাহাবীদের মতামতকেও সে অগ্রাহ্য করতো, যেমন আবু বকর এবং উমর।
যখনই তার দৃষ্টিতে কোর'আনের কোন একটি আয়াতকে উলামাদের কথার বিরোধী মনে হত। তখন ই সে বলত, নবী বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য কোর'আন এবং সুন্নাহ রেখে গেলাম। তিনিতো বলেন নি, আমি তোমাদের জন্য কোর'আন, সুন্নাহ, সাহাবা, এবং মাযহাবের ইমামদেরকে রেখে যাচ্ছি।

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদী নামের যুবকটি খুবই রূঢ় প্রকৃতির ছিল। অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে যেত। বিশেষ করে অটোমান সরকারকে বেশীর ভাগ সময় খুচিয়ে খুচিয়ে কথা বলত, তবে ইরান সরকার নিয়ে সে কোন বাজে মন্তব্য করতোনা।
আমার দোকানের মালিকের সাথে তার উঠাবসা ছিল একটি মাত্র কারণে, আর তা হচ্ছে, তারা দুজনেই ইস্তাম্বুলের খলীফা সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করত। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব যে, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদীর মত সুন্নী লোক আব্দুর রিদার মত শিয়ার সাথে বন্ধুত্ব করেছিল? মূলত এ শহরে সুন্নীরা বন্ধুভাবাপন্ন হবার ভান করত, এমন কি শিয়াদের সাথে ভাই ভাই সম্পর্কও গড়ে তোলত। শহরটির বেশীর ভাগ অধিবাসীরা আরবী, ফার্সি এবং তুর্কী ভাষা জানতো।
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদী লোকটি বাহ্যিকভাবে সুন্নী ছিল। যদিও সুন্নীরা শিয়াদের সমালোচনা করে। বলে, এরা অমুসলিম। কিন্তু এই লোকটি কখনও শিয়াদেরকে নিয়ে বাজে ,মন্তব্য করতনা।
নজদের মুহাম্মাদ বলত, চার মাযহাবের কোন একটিকে মেনে চলা- এটা কোন সুন্নী করতে পারেনা। এটা অযৌক্তিক। সে বলত, আল্লাহ তো কোর'আনে মাযহাব অনুসরণ করতে বলেন নাই। কোন প্রমাণ নেই।
এ লোকটি উদ্দেশ্যজনকভাবে বিষয়ভিত্তিক কোর'আনের আয়াত এবং হাদীসগুলোকে এড়িয়ে যেত।

আব্দুর রিদার দোকান।
মুহাম্মাদ নজদী আলোচনা করছে একজন মেহমানের সাথে। নাম শায়েখ যাওয়াদ। কুম থেকে আসা এক শিয়া স্কলার।
যাওয়াদঃ " তুমি যখন মনে কর যে আলী একজন মুজতাহিদ ছিলেন, তাহলে শিয়াদের ন্যায় তাকে অনুসরণ করছনা কেন?"
মুহাম্মাদ নজদীঃ "উমার এবং অন্যান্য সাহাবা থেকে আলী ব্যতিক্রম নন। তার কোন কথা দলীল হতে পারেনা। কোর'আন এবং সুন্নাহ ই হচ্ছে একমাত্র দলীল।"
(কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, যে কোন সাহাবীর স্টেটমেন্ট দলীল হিসেবে বিবেচিত হয়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাহাবীদেরকে অনুসরণ করতে বলেছেন, কিন্তু মুহাম্মাদ নজদী এটা অস্বীকার করেছেন, আজ তাদের অনুসারীরা এরকম ই সাহাবীদের কাজকে অস্বীকার করে। এটা আর কিছু নয়, তাদেরই নেতার আদর্শ তারা অনুসরণ করছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না)।
যাওয়াদঃ "যেহেতু আমাদের নবী বলেছেন, আমি জ্ঞানের শহর আর আলী হচ্ছেন তার দরজা। এটা কি প্রমাণ করে না যে আলী অন্যান্য সাহাবা থেকে ভিন্ন?"
মুহাম্মাদ নজদীঃ "শুনুন, যদি আলীর কথা দলীল হত, তবে নবী এভাবে বলতেন, আমি কোর'আন সুন্নাহ এবং আলীকে রেখে গেলাম। কিন্তু তিনি কি এভাবে বলেছেন?"
যাওয়াদঃ "হাঁ, আমরা মনে করি, তিনি তা বলেছেন। তিনি বলেছেন, 'আমি কোর'আন কারীম রেখে গেলাম এবং আমার আহলে বাইতকে রেখে গেলাম।' আর আলী হচ্ছেন আহলে বাইতের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।"
মুহাম্মাদ নজদী এটা অস্বীকার করে বলল, নাহ, নবী এমন কথা বলেন নি।
যাওয়াদ বিভিন্ন ডকুমেন্ট দিয়ে তার কথা ভুল প্রমাণিত করল।
যাই হোক, মুহাম্মাদ নজদী কিন্তু যাওয়াদের কথা মেনে নিতে পারলনা।
বলল,,
"তুমি বলছ, নবী এটা বলেছেন, এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে নবীর সুন্নাহ বলতে আর কী থাকলো?"
যাওয়াদঃ "নবীর সুন্নাহ হচ্ছে কোর'আনের ব্যাখ্যা। সুতরাং নবীর বাণী, "আমি কিতাবুল্লাহ এবং আমার আহলে বাইতকে রেখে গেলাম" এখানে আল্লাহর কিতাবের মধ্যে সুন্নাহ অন্তর্ভুক্ত।"
আমি এ আলোচনাকে খুব ই উপভোগ করলাম। যাওয়াদের সামনে মুহাম্মাদ নজদীকে অত্যন্ত গতিহীন ও অসহায় মনে হল, যেমন শিকারীর হাতে অসহায় থাকে চড়ুই পাখির বাসা।

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদীর মত এমন এক লোকের সন্ধান ই আমি করছিলাম। কারণ এ লোকটি উলামাদেরকে দু চোখে দেখতে পারত না।
তাকে আমার শিকার বানানোর কারণ হল, সে স্বাধীন ভাবে কোর'আন হাদীস বুঝতে চায়। সে তার নিজস্ব মতামতকেই যথেষ্ট মনে করত।
মুহাম্মাদ নজদী আহমেদ ইফেন্দী (যিনি আমাকে ইস্তাম্বুলে শিক্ষা দিয়েছিলেন) থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের ছিল। মুহাম্মাদ ইফেন্দী পাহাড়ের ন্যায় অটল ছিলেন। কোন শক্তি ছিলনা তাকে টলানোর। তিনি যখন আবু হানিফার নাম নিতেন, তার পূর্বে তিনি অযু করে নিতেন। যখনই তিনি বুখারী নামক হাদীস গ্রন্থ হাতে নিতেন, তার পূর্বে তিনি অযু করতেন।
সুন্নীরা এ গ্রন্থকে ভীষণ শ্রদ্ধা করে।
নজদের মুহাম্মাদ ছিল তাঁর ঠিক উল্টো। সে আবু হানিফাকে নিয়ে ঘৃণাভরে কথা বলত। সে বলত, আবু হানিফা কী জানত? আমি তার থেকে বেশী জানি। সে বলত, বুখারীর অর্ধেক হাদীসের ক্ষেত্রে অনেক ভুল আছে।
আমি তার সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোললাম। যেখানে সেখানে তার প্রশংসা করতে শুরু করলাম।
আমি তাকে বললাম,
"মুহাম্মাদ, তুমি উমর এবং আলি থেকে ও মহান। নবী যদি এখন বেঁচে থাকতেন, তাহলে তাদের পরিবর্তে তোমাকে ই তিনি খলীফা বানাতেন।আমি আশা করি, তোমার হাত ধরেই ইসলামের নব জাগরন আসবে। তুমি ই হচ্ছ একমাত্র স্কলার যে কিনা সারা দুনিয়ায় ইসলাম প্রচার করতে সফলভাবে সক্ষম।"
শলা-পরামর্শ হয়ে গেল।
আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, কোরআন হাদীসের নুতন ব্যাখ্যা দিতে হবে। এবং এ নতুন ব্যাখ্যায় থাকবে আমাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনা ও মতামতের প্রতিফলন। যে ব্যাখ্যার সাথে সাহাবাদের কথার মিল থাকবে না, চার মাযহাবের ইমাম দের কথার মিল থাকবেনা। মুফাসসির ও মুহাদ্দিস গণের ব্যখ্যার মিল থাকবে না। (মুফাসসির বলা হয় তাকে যে গভীর জ্ঞান দ্বারা কোর'আনের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন, এবং মুহাদ্দিস হচ্ছেন তিনি যিনি গভীর জ্ঞান দ্বারা হাদীসের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন)।
আমরা কোর'আন পড়া শুরু করলাম, এবং কতিপয় আয়াত নিয়ে ধীরে ধীরে আলোচনা-পর্যালোচনা করা শুরু করলাম।
একজন ঝানু গুপ্তচর হিসেবে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদীকে বিভ্রান্ত করার প্রথম পদক্ষেপ নিয়ে নিলাম।

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদী। চেষ্টা করছিল একজন বিপ্লবী হিসেবে নিজেকে তোলে ধরার। আর সে জন্যই সে আমার চিন্তা ও পরিকল্পনাকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করেছিল।
কোন এক দিন।
আমি তাকে বললাম,
"দেখ, মুহাম্মাদ, জিহাদ তো ফরয নয়।"
মুহাম্মাদ বলল,
"কেন? আল্লাহ বলেননি, তোমরা অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর?"
আমি বললাম,
" তাহলে বল দেখি, আল্লাহর নির্দেশ সত্ত্বেও নবী কেন মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেননি? আল্লাহ তো বলেছেন, 'অবিশ্বাসী এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর'।"
সে বলল,
"নবী তো তাদের বিরুদ্ধে কথা দ্বারা জিহাদ করেছেন।"
আমি বললাম,
"আল্লাহ ফরয করেছেন এমন জিহাদ কি শুধু মাত্র কথা দ্বারা ই আদায় হয়ে যায়?"
সে বলল,
"রাসুলুল্লাহ তো অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন।"
আমি বললাম,
দেখ, মুহাম্মাদ, নবী তো অবিশ্বাসীদের সাথে জিহাদ করেছেন আত্মরক্ষার জন্য। কারণ তারা তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল।"
সে মাথা নাড়াল।
অন্য এক দিন।
'আমি তাকে বললাম,
"মুত'আহ বিয়ে করা তো জায়েয আছে।"
সে বলল,
"নাহ, এটা জায়েয নয়।"
আমি বললাম,
"আল্লাহ তো কোর'আনে বলেছেন, তোমরা যদি তাদেরকে ভোগ করতে চাও তো তাদেরকে আরোপকৃত মোহর দিয়ে দাও।"
সে বলল,
"উমর তো তাঁর সময়ে ঘটে যাওয়া দুটি মুত'আহ বিয়ে নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং বলেছিলেন,যে মুত'আহ বিয়ে করবে, তাকে শাস্তি দেয়া হবে।"
আমি বললাম,
"দেখ মুহাম্মাদ, উমর এটা নিষেধ করেছেন অথচ তিনি জানতেন যে নবী এমন বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন। এখন তুমি ই বল, যেখানে নবী নিজেই অনুমতি দিয়েছেন, সেখানে তাঁর কথা অগ্রাহ্য করে তুমি উমরের কথা কেন গ্রহণ করবে?"
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদী নিরত্তোর। কোন জবাব আসল না। বুঝে নিলাম, শিকার ধরা পড়েছে।
চলবে-

ref: https://www.facebook.com/photo.php?fbid=399135623602496&set=a.260763954106331.1073741827.100005181848831&type=1&permPage=1

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন