লা-মাযহাবী, ওয়াহাবীদের প্রতিষ্ঠাতা গুরু মুহাম্মদ বিন আব্দিল ওয়াহাব নজদীর ব্রিটিশ এজেন্ট হওয়ার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনীঃ (পর্ব ২) |
লামাযহাবীদের শায়েখ তাহলে ব্রিটিশদের লেলিয়ে দেয়া ভয়ংকর এজেন্ট!!!!!!
কীভাবে?
গুপ্তচর নিজেই এ চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছে তার confessions of a British spy Hamper নামক আর্টিকেলে। এখানে আর্টিকেলটির সম্পূর্ণ হুবহু অনুবাদ না করা হলেও প্রাসঙ্গিক মূল বিষয়গুলো যথাযথভাবে তোলে ধরার চেস্টা করা হয়েছে।
জানতে হলে শুধু এক পর্ব পড়লেই হবেনা। সবগুলো পড়তে হবে।
তাই, আমাদের সাথে থাকুন, পড়ুন, শেয়ার করে অন্য ভাইকে জানতে দিন। সিরিয়াস।
__________________________ __________________________ __
কীভাবে?
গুপ্তচর নিজেই এ চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছে তার confessions of a British spy Hamper নামক আর্টিকেলে। এখানে আর্টিকেলটির সম্পূর্ণ হুবহু অনুবাদ না করা হলেও প্রাসঙ্গিক মূল বিষয়গুলো যথাযথভাবে তোলে ধরার চেস্টা করা হয়েছে।
জানতে হলে শুধু এক পর্ব পড়লেই হবেনা। সবগুলো পড়তে হবে।
তাই, আমাদের সাথে থাকুন, পড়ুন, শেয়ার করে অন্য ভাইকে জানতে দিন। সিরিয়াস।
__________________________
পর্ব- দুই
--------------------------
গুপ্তচর হেম্পার বলছে,
ঘাম ঝরানো ভ্রমণ শেষে আমি ইস্তাম্বুল এসে পৌঁছলাম। সবাইকে আমার নাম বললাম, মুহাম্মাদ।মসজিদে যাওয়া আসা শুরু করলাম। মুসলমানদের নিয়মানুবর্তিতা, পরিচ্ছন্নতা, এবং মান্যতা- এ গুণগুলো আমি সত্যিই পছন্দ করতাম।
কয়েক মুহূর্তের জন্য আমার নিজেকে প্রশ্ন করলাম, আমরা কেন এ সকল ইনোসেন্ট লোকদের সাথে ফাইট করছি? এটাই কি লর্ড জীসাস মেসায়াহ আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন?
কিন্তু সেটা ছিল কয়েক মুহূর্তের জন্য। খুব দ্রুতগতিতে অর্পিত কর্তব্যবোধ আমার মধ্যে জেগে উঠল। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার ডিউটি আমি পালন করবই।
ইস্তাম্বুলে আমি একজন বৃদ্ধ স্কলারের সাথে সাক্ষাত করলাম। নাম, আহমেদ ইফেন্দী। দীল খোলা মানুষ, আধ্যাত্মিকতা এবং পরোপকারীতার গুণাবলী সম্পন্ন এক লোক, আমার ধর্মে তাঁর ন্যায় একজন ভাল মানুষ কাউকে দেখিনি। এইলোক দিন রাত চেস্টা করছিল, নিজেকে নবী মুহাম্মাদের ন্যায় গড়ে তোলবে। তাঁর মতে, মুহাম্মাদ ছিলেন এক মহান এবং উৎকৃষ্ট মানুষ। যখনই লোকটি মুহাম্মাদের নাম নিত, তাঁর দু চোখ ভিজে যেত।
আমার ভাগ্য ভাল, সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে নাই, আমি কে? কোথা থেকে এসেছি? সে আমাকে মুহাম্মাদ ইফেন্দী বলে ডাকতো। আমার সকল প্রশ্নের জবাব সে ধৈর্যের সাথে দিত, কারণ তাঁর ধারণা ছিল, আমি একজন মেহমান, ইস্তাম্বুলে কাজ করতে এসেছি, খলীফার অধীনে।
একদিন আমি আহমেদ ইফেন্দীকে বললাম, আমার মা বাবা তো মরে গেছে। আমার কোন ভাই বোন নেই। উত্তরাধিকার সুত্রে আমার কোন সম্পত্তি ও নেই। আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলাম কোর'আন এবং সুন্নাহ শিক্ষা লাভ করতে এবং একটি কর্মময় জীবন যাপন করতে, যাতে ইহ ও পরকালে সফল হওয়া যায়।
আমার কথা শুনে সে খুবই আনন্দিত হল এবং বলল, "তোমাকে মুল্যায়ন ও সম্মান করা যায় তিনটি কারণে," আমি তখন লিখতে শুরু করলাম,
১-তুমি একজন মুসলমান, আর সকল মুসলমান ভাই ভাই।
২- তুমি একজন মেহমান। আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মেহমানকে আপ্যায়ন কর।
৩- তুমি কাজ করতে চাও। আর হাদীসে আছে, যে লোক কাজ করে, সে আল্লাহর নিকট প্রিয়।
কথাগুলো আমাকে খুবই আনন্দিত করল।
তাঁর কথাগুলো আমাকে খুবই আনন্দিত করল। আমি নিজেকে বললাম, এমন উজ্জ্বল সত্য কি খ্রিস্টান ধর্মে আছে? এটা লজ্জার বিষয় যে, এমন একটি দৃষ্টান্তও খ্রিস্টান ধর্মে নেই।
আমি আহমেদ ইফেন্দীকে বললাম, আমি কোর'আন শিখতে চাই।
তিনি জানালেন, তিনি আনন্দের সাথেই তা করবেন। তিনি সুরা ফাতেহা অর্থ সহ ব্যাখা সহকারে শিক্ষা দেয়া শুরু করলেন। দুই বৎসরে আমি পুরো কোর'আন পড়ে ফেললাম। প্রতিটি লেসনের আগে তিনি নিজে অযু করতেন এবং আমাকেও অযু করতে বলতেন। তিনি কিবলাহর দিকে মুখ করে বসতেন এবং টিচিং শুরু করতেন।
মুসলমানরা যেটাকে অযু বলে, সেটা হচ্ছে ধারাবাহিক ওয়াশিং, যেমন,
মুখ ধৌত করা
ডান হাত আংগুল থেকে কবজি পর্যন্ত ধৌত করা
বাম হাত আংগুল থেকে কবজি পর্যন্ত ধৌত করা
মাথা মাসেহ করা
উভয় পা ধৌত করা
মিসওয়াক করাটা আমার কাছে বড়ই বিরক্তিকর ছিল। মিসওয়াক হচ্ছে গাছের ডাল, যা দ্বারা মুসলমানগণ দাঁত সহ মুখের ভিতর পরিস্কার করে। আমি মনে করতাম, এ রকম গাছের একটি ডাল মুখ এবং দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। মাঝে মধ্যে এটা করতে গিয়ে আমি দাঁতে আঘাত করে ফেলতাম, ফলে রক্ত বেরিয়ে আসতো। তারপর ও আমাকে এটা করতে হয়েছিল, কারণ মুসলমানগণ এটাকে তাদের রাসুলের মুয়াক্কাদ সুন্নত বলতো। তারা বলতো, এ কাঠের টুকরো খুবই উপকারী। সত্যিই, একদিন আমার মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে আসা বন্ধ হয়ে গেল এবং ব্রিটিশদের মুখে এক ধরণের ফাউল গন্ধ থাকে যেটা আমার ও ছিল- এটাও চলে গেল।
ইস্তাম্বুলে অবস্থানকালীন সময় রাতের বেলা আমি একটি রুমে থাকতাম। রুমটি একটি মসজিদের একজন খাদেমের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলাম। খাদেমের নাম ছিল, মারওয়ান ইফেন্দী। মারওয়ান হচ্ছে নবী মুহাম্মাদের সাথীদের একজনের নাম। খাদেম লোকটির স্নায়ুতন্ত্র খুবই দুর্বল ছিল, অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে পড়ত। সে তার নাম নিয়ে গর্ব করত এবং বলত, ভবিষ্যতে আমার কোন ছেলে হলে তার নাম রাখব মারওয়ান, কারণ মারওয়ান হচ্ছেন ইসলামের বীর যুদ্ধাদের একজন।
মারওয়ান ইফেন্দী রাতের খাবার বানাতো। আমি শুক্রবার কাজে যেতাম না। শুক্রবার হচ্ছে মুসলমানদের হলি ডে। আর সপ্তাহের অন্যান্য দিন আমি এক কাঠমিস্ত্রীর সাথে কাজ করতাম। তাঁর নাম ছিল, খালিদ। পেমেন্ট ছিল সাপ্তাহিক। আমি কাজ করতাম পার্ট টাইম। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। এই কাঠমিস্ত্রী অবসর সময়ের বেশীর ভাগ সময় খালেদ বিন ওয়ালীদের গুণকীর্তন করত। খালিদ বিন ওয়ালীদ ছিলেন ইসলামের একজন বীর সেনাপতি। অনেক যুদ্ধে জয়লাভ করেছেন। কিন্তু উমার বিন খাত্তাবের চিটি এবং খালিদ বিন ওয়ালীদের সেনাপতির পদ থেকে অপসারনের ঘটনাটি যখন সে বলত, তখন তার চেহারা বিরক্তিতে ভরে যেত।
খালিদ নামের মিস্ত্রীটা কিন্তু বড্ড পাঁজি টাইপের ছিল। তবে কোন কারণে সে আমাকে খুবই বিশ্বাস করত। হয়তঃ তার কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতাম বলে। সে ইসলামী শরীয়ত এড়িয়ে চলত। কিন্তু যখন সে তার বন্ধুদের সাথে থাকত, তখন শরীয়তের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলতো। সে শুক্রবারের নামাজে যেত, তবে অন্যান্য দিনের নামাজের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।
আমি সকালের নাশতা দোকানেই করতাম। কাজ শেষ করে আমি মসজিদে যেতাম। জোহরের নামাজ পড়তাম। আছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম। আছরের নামাজ পড়ে আহমেদ ইফেন্দির বাসায় যেতাম। তিনি আমাকে কোর'আন পড়াতেন, আরবী এবং তুর্কী ভাষা শিক্ষা দিতেন। সময় দিতেন দু'ঘন্টা। প্রতি শুক্রবার আমি আমার সাপ্তাহিক ইনকামের টাকা তাঁকে দিয়ে দিতাম, কারণ তিনি আমাকে খুব ভাল পড়াতেন। সত্যি ই তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন, কীভাবে কোর'আন পড়তে হয়, তিনি শিখিয়েছিলেন আরবী ও তুর্কী ভাষা সহ ইসলাম ধর্মের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি।
আহমেদ ইফেন্দী জানতে পারলেন, আমি অবিবাহিত। তিনি আমার নিকট তাঁর একটি মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইলেন। আমি অস্বীকৃতি জানালাম। তিনি আমাকে উৎসাহিত করলেন। বলেন, বিবাহ হচ্ছে নবীর সুন্নত। নবী বলেছেন,যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়। আমি তাকে মিথ্যা বললাম, দেখুন, আমার ঐ-----পাওয়ার নেই। (পাঠক, বুঝে নিন)। তিনি থামলেন। আর এভাবেই ইস্তাম্বুলে আমি আমার পরিচিতি ও বন্ধুত্ব বজায় রাখতে থাকলাম।
ইস্তাম্বুলে আমার যখন দু বৎসর পূর্ণ হল, আমি আহমেদ ইফেন্দীকে বললাম, আমি বাড়ী ফিরে যেতে চাই। তিনি বললেন, না, যেওনা। কেন যেতে চাচ্ছ? তুমি যা চাচ্ছ, ইস্তাম্বুলে তা তুমি পেতে পার। আল্লাহ এই শহরে ধর্ম এবং জাগতিক সব কিছু একই সময়ে দিয়েছেন। তুমি বলেছ যে তোমার বাবা মা মারা গেছে। তোমার কোন ভাই বোন নেই। তাহলে কেন তুমি ইস্তাম্বুলে স্থায়ীভাবে বাস করছনা? আহমেদ ইফেন্দী আমার উপর এক ধরণের 'বাধ্যতামুলক নিরভরশীলতা' ফর্ম করেছিলেন। যার কারণে তিনি আমার সঙ্গ ত্যাগ করতে চাননি। তিনি আমাকে ইস্তাম্বুলে বাড়ি নির্মাণে উৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু ইস্তাম্বুল সম্পর্কে পুরো রিপোর্ট প্রদান এবং নুতন নির্দেশের জন্য আমার দায়িত্ববোধ আমাকে লন্ডনে ফিরে বাধ্য করেছিল।
ইস্তাম্বুলে থাকাকালীন সময় প্রতি মাসে আমি পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট মিনিস্ট্রিতে পাঠাতাম। আমার মনে পড়ছে, আমাকে বলা হয়েছিল লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজনে সমকামিতা প্রাকটিস করতে। ইংল্যান্ডে এটা অহরহ হয়ে থাকে। আসমান ভেঙ্গে আমার মাথার উপর পড়েছিল। কারন, আমার জীবনে এটা কখনও ঘটেনি। কিন্তু আমার বসেরা এটার জন্য কমান্ড করল। আমি বাধ্য হলাম এমন কাজ করতে।
আহমেদ ইফেন্দীকে বিদায় জানালাম। দু চোখ তাঁর অশ্রু সিক্ত হয়ে গেল। তিনি বললেন, ছেলে আমার, আল্লাহ তোমার সাথী হোন। যদি কখনও ইস্তাম্বুল ফিরে আস আর আমাকে মৃত দেখতে পাও, আমাকে স্মরণ করিও। আমার আত্মার মাগফিরাতের জন্য সুরা ফাতিহা পড়িও। হাশরের ময়দানে রাসুলের সম্মুখে আমাদের মিলন হবে।
সত্যি ই আমি একধরণের বেদনা অনুভব করলাম, আর এটা এতই প্রবল ছিল যে আমি কান্না ধরে রাখতে পারলাম না।
তবে আর যাই হোক, আমার দায়িত্ববোধ ছিল বরাবরই শক্তিশালী।
আমার পূর্বে আমার বন্ধুরা লন্ডনে পৌঁছে গেল। আমাদের সবাইকে নুতন নির্দেশনা দেয়া হল। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের মাত্র ছয় জন ফিরে আসতে পেরেছিল।
সেক্রেটারী জানালেন, আমাদের বাকী চারজনের একজন মিশরে মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। তবু তিনি আনন্দিত ছিলেন এ জন্য যে, সে কোন গোপনীয়তা ফাঁস করেনি। দ্বিতীয়জন রাশিয়ায় গিয়েছিল, সে সেখানেই থেকে গিয়েছিল, ফিরে আসেনি। সে একজন রাশিয়ান ছিল। তৃতীয় জন প্লেগে মারা গিয়েছিল। সে তখন বাগদাদের ইমারা শহরে ছিল। চতুর্থ জন ইয়ামেনে ছিল এবং এক বৎসর পর্যন্ত মিনিস্ট্রি তাঁর কাছ থেকে রিপোর্ট রিসিভ করেছিল। এরপর থেকে অনেক চেস্টা করেও তাঁর আর কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলনা।
মিনিস্ট্রি এ চারজনের ঘটনাকে আকস্মিক দুর্ঘটনা হিসেবেই ধরে নিয়েছিল।
সেক্রেটারী মিটিং ডাকলেন। আমাদের রিপোর্ট গুলো আনা হল। তারা আমার রিপোর্ট থেকে কিছু নোট নিলেন। মিনিস্টার, সেক্রেটারী, আরো যারা ছিলেন সবাই আমার কাজের প্রশংসা করলেন।
আমি কুর'আন, শরিয়ত, তুর্কী এবং আরবী ভাষা শিক্ষায় সন্দেহাতীতভাবে সফল হয়েছিলাম। তবুও আমি অটোমান এম্পায়ারের দুর্বল দিক গুলো নিয়ে রিপোর্ট পেশ করতে অক্ষম হলাম। দু চারটি মিটিং এর পর সেক্রেটারী আমাকে ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন করলেন। আমি বললাম, আমার প্রধান কাজ ছিল, কোর'আন, শরিয়ত এবং ভাষা শিক্ষা। তাই অন্য কোন বিষয়ে সময় দিতে পারিনি। তবে এখন আমি আপনাকে খুশি করতে পারি, যদি আমাকে বিশ্বাস করেন।
সেক্রেটারী বললেন,
হেম্পার, তোমার পরবর্তী মিশনে দুটি কাজ রয়েছেঃ
১- মুসলমা্বদের দুর্বলতার দিক খুঁজে বের করা, যাতে আমরা তাদের দেহের ভিতরে ঢুকে দেহের প্রতিটি জোড়া বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারি। প্রকৃতপক্ষে, এটাই হচ্ছে, শত্রুকে আক্রমণ করার উত্তম পন্থা।
২- যখন ই তুমি এই দিক গুলো খুঁজে বের করবে এবং আমার দিক নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের একে অপরের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেবেদেশনই তুমি একজন সফল এজেন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। আর মিনিস্ট্রী থেকে তুমি মেডেল অর্জন করবে।
আমি্দেশপর লন্ডনে ছয় মাস ছিলাম। চাচাতো বোন মারিয়াকে বিয়ে করলাম। আমার বয়স তখন ২২ বছর আর সে ছিল ২৩ বছরের যুবতী। মারিয়া ছিল খুব ই সুন্দরী, বুদ্ধিমতি এবং সংস্কৃতিমনা। তার সাথে কাটানো দিনগুলোই ছিল আমার জীবনের সবচে' সুন্দর সময়।
মারিয়া তখন প্রেগ্নেন্ট। নুতন মেহমানের অপেক্ষায় আমরা দিন গুণছিলাম। এমন সময় সংবাদ আসল, আমাকে ইরাক যেতে হবে।
আদেশনামাটি পেয়ে আমার মন ব্যথায় অস্থির হয়ে উঠল।
যাই হোক, দেশের গুরুত্বের কথা বিবেচনা এবং সহকর্মীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হবার বাসনা স্বামিত্ব এবং পিতৃত্বের চেয়ে অনেক বড় ছিল বিধায় দ্বিধাহীন চিত্তে কাজটি গ্রহণ করলাম। আমার স্ত্রী চেয়েছিল বাচ্চাটির জন্মের পর পর্যন্ত মিশন স্থগিত করতে। আমি সেটা উপেক্ষা করলাম। বিদায় বেলায় আমরা উভয়ে ই কাঁদলাম। আমার স্ত্রী বলল, চিটি লিখবে কিন্তু। স্বর্ণের ন্যায় মুল্যবান আমাদের নুতন বাড়ি খানা নিয়ে আমি তোমাকে চিটি লিখব। তার কথাগুলো আমার অন্তরে এমন ঢেউ তোলেছিল যে আমি মিশনটি বাদ দিতে যাচ্ছিলাম। অনেক কষ্ট করে নিজের আবেগকে কন্ট্রল করলাম। বিদায় জানিয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনার জন্য আমি মিনিস্ট্রীতে গিয়ে পৌঁছলাম।
ছয় মাস পর আমি নিজেকে ইরাকের বসরা শহরে খুঁজে পেলাম। শিয়া সুন্নী দুটি গ্রুপে বিভক্ত ছিল শহরটির জনগণ। এ শহরে খ্রিষ্টান সহ বিভিন্ন ভাষাভাষীর লোক বসবাস করতো।
শিয়া সম্পর্কে একটু আলোকপাত করা যাক।
শিয়ারা বলে, তারা আলী বিন আবু তালিবকে অনুসরণ করে যিনি ছিলেন মুহাম্মাদ আলাইহিস সালামের কন্যা ফাতেমার স্বামী এবং একই সাথে মুহাম্মাদ আলাইহিস সালামের চাচাতো ভাই। তারা বলে, মুহাম্মাদ আলাইহিস সালাম আলীকে খলীফা হিসেবে সফল করে তোলার জন্য আলী এবং ১২ জন ইমামকে নিযুক্ত করেছিলেন।
আমার মতে, আলী, হাসান এবং হুসাইনের খেলাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শিয়ারা সঠিক পথেই ছিল। কারণ, ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে আমি যতটকু জানি, আলী একজন ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্রের লোক ছিলেন যা খেলাফতের জন্য জরূরী ছিল।
প্রফেটহুড (নবী হওয়া) বিষয়টি খ্রিষ্টানদের নিকট বরারাবরই সন্দেহজনক বিষয়। মুসলমানরা বলে, মুহাম্মাদের নবী হওয়ার বিষয়ে অনেক প্রমাণ রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে কোর'আন। আমি কোর'আন পড়েছি। সত্যিই এটা উচুমানের একটি বই। এমনকি তাওরাত এবং বাইবেল থেকে ও উচুমানের। কারণ এর মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট নীতিমালা এবং নীতি নৈতিকতার দিক নির্দেশনা।
এটা আমাকে অবাক করেছে যে, মুহাম্মাদের ন্যায় একজন অশিক্ষিত লোক কীভাবে এমন এক কিতাব নিয়ে আসলেন, কীভাবে এমন এক লোকের মধ্যে নৈতিকতা, মেধা, এবং ব্যক্তিগত চরিত্রে সমাহার ঘটেছিল যা একজন লোকের পক্ষে খুব বেশী পড়াশুনা ও ভ্রমণ করে ও সম্ভবপর হয়না। আমি ভাবছিলাম, এগুলো কি মুহাম্মাদের নবী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রমাণ হতে পারে?
আমি সদা চেস্টা করছিলাম মুহাম্মাদ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে সত্য উদ্ঘাটনের। একবার আমি লন্ডনের এক প্রিস্টের কাছে আমার ইন্টারেস্ট প্রকাশ করেছিলাম। তার উত্তরটি ছিল গোড়ামীতে পূর্ণ। সে আমাকে আদৌ বুঝাতে সক্ষম হয়নি। আমি যখন তুর্কীতে ছিলাম, আহমেদ ইফেন্দীকে এ বিষয়ে কয়েকবার প্রশ্ন করেছিলাম কিন্তু সন্তোষজনক কোন উত্তর পাইনি। সত্যি কথা বলতে কি, আমি তাকে সরাসরি এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করিনি এ ভয়ে যে না জানি তিনি আমাকে কোন প্রকার সন্দেহ করে ফেলেন।
আমি গভীর ভাবে চিন্তা করছি মুহাম্মাদ আলাইহিস সালামকে নিয়ে। খ্রিষ্টান হিসেবে আমি এখনও প্রফেটহুড বিশ্বাস করিনা সত্য, তবে তিনি যে সত্যিকারের একজন জিনিয়াস ছিলেন, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
সুন্নীদের ব্যাপারে কিছু বলা যাক,
নবীর মৃত্যুর পর মুসলমানগণ আবু বকর, উমার, উছমান, এবং আলীকে খেলাফতের জন্য যোগ্য মনে করেছিল। এ ধরণের বিতর্ক সকল ধর্মে ই বিদ্যমান। বিশেষ করে খ্রীস্টান ধর্মে বেশী বিদ্যমান। উমার এবং আলীর মৃত্যু থেকে নিয়ে আজ অবধি চলা এ বিতর্ক ভাল কিছু বয়ে নিয়ে আসেনি। আমি মনে করি, যদি মুসলমানগণ সত্যিকার অর্থে যুক্তিপরায়ণ হয়ে থাকে, তাহলে পুরানো দিনের চিন্তা ছেড়ে দিয়ে তাদের বর্তমান নিয়ে ভাবা উচিত।
একদিন আমি মিনিস্ট্রীতে শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যকার বিরোধ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলাম,
" যদি মুসলমানগণ জীবনের সঠিক কনসেপ্টটি জানতো, তবে তারা শিয়া সুন্নী বিরোধ মিঠিয়ে ফেলে এক প্লাটফর্মে চলে আসতো।"
কেউ একজন তখন আমাকে বাধা দিয়ে বলেছিল,
" হেম্পার, তোমার কাজ হচ্ছে তাদের মধ্যকার বিরোধকে খেপিয়ে তোলা, তাদের একত্রীকরণের চিন্তা করা নয়।"
ইরাক যাওয়ার পূর্বে সেক্রেটারী আমাকে বলেছিলেন,
"হেম্পার, তোমার জানা উচিত যে, সৃষ্টির আদি থেকে মানুষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এটা মেসায়াহ আসা পর্যন্ত চলবে। তোমার কাজ হচ্ছে, এ বিরোধগুলোকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং মিনিস্ট্রীতে রিপোর্ট দেয়া। মুসলমানদের মধ্যে চলমান বিরোধের যতই তুমি অবনতি ঘটাতে পারবে, ততই ইংল্যন্ডের প্রতি তোমার সেবা মহান থেকে মহানতর হয়ে উঠতে থাকবে।"
তিনি আরও বলেছিলেন,
" এ ক্ষেত্রে তোমার প্রথম কাজ হবে প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কিয়ে দেয়া। ইতিহাস বলছে, সকল প্রকার বিপ্লবের মুল সুত্র হচ্ছে জনগণের বিদ্রোহ। যখন মুসলমানদের ঐক্য ভেঙ্গে যাবে, তখন তাদের একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটা তারা একদম ভুলে যাবে। তাদের শক্তি তখন দুর্বল হয়ে পড়বে , আর এভাবেই আমরা তাদেরকে অতি সহজেই ধ্বংস করতে সক্ষম হব।
বসরায় এসে পৌঁছলাম। একটি মসজিদে সেটল্ড হলাম। মসজিদের ইমাম উমার তাঈ ছিলেন আরব বংশদ্ভোত সুন্নী মুসলিম। তাঁর সাথে সাক্ষাত হল। প্রথমে তিনি আমাকে সন্দেহ করলেন। এক গাঁদা প্রশ্ন করলেন। আমি উত্তরগুলো মেনেজ করার আপ্রাণ চেস্টা করলাম, যেমন, আমি তুরস্কের ইগদীর এলাকা থেকে এসেছি।ইস্তামবুলের আহমেদ ইফেন্দীর অনুসারী।
আমি তাকে আরও কিছু তথ্য দিলাম। তুর্কী ভাষায় কথা বললাম।
ইমাম তখন উপস্থিত জনতার একজনকে চোখ দিয়ে ইশারা করলেন, বুঝালেন, আমি ঠিকভাবে তুর্কী ভাষায় কথা বলছিলাম কি না? পজিটিভ উত্তর আসল।
ইমামকে কব্জা করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত হলাম। কিন্তু দিন কয়েক পর হতাশার সাথে লক্ষ করলাম, ইমাম আমাকে একজন তুর্কী গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ করছেন।
আমি লক্ষ করলাম, সুলতান কর্তৃক নিয়োজিত বসরার গভর্নরের সাথে উনার বিরোধ রয়েছে।
মসজিদ ত্যাগ করতে বাধ্য হলাম। একটি সরাইখানায় রুম ভাড়া করে সেখানে চলে গেলাম। সরাইখানার মালিক মুর্শিদ ইফেন্দী ছিল একটা ইডিয়ট। প্রতিদিন ভোরে ফজরের আযান হওয়ার সাথে সাথে দরজায় নক করে প্রচন্ড বিরক্ত করত। কী আর করব? তাকে মেনে চলা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা। বাধ্য হয়েই প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠতাম এবং ফজরের নামায আদায় করতাম। শুধু এতেই রেহাই পেতাম না, প্রতিদিন সে এসে বলত,
"তুমি নামায পর কোর'আন তেলাওয়াত করবে।"
আমি তাকে বলতাম,
"দেখ, কোর'আন তেলাওয়াত করা ফরয কিছু না।"
আমি তাকে জিজ্ঞেস করতাম,
'আচ্ছা, বলতো, তুমি আমাকে এত চাপ দিচ্ছ কেন?'
সে জবাব দিত,
"দেখ, দিনের বেলা ঘুমালে দরিদ্রতা এবং অকল্যাণ এসে ভর করে, আর এটা আমার সরাইখানা এবং এখানকার বাসিন্দাদের উপর প্রভাব ফেলবে।"
আমাকে সরাইখানা থেকে বের করে দেবে, এই ভয়ে আমি বাধ্য হয়ে তার কথা মেনে চলতাম। প্রতিদিন আমি ফজরের নামায আদায় করতাম এবং এক ঘন্টা কোর'আন তেলাওয়াত করতাম।
একদিন পাঁজি মুরশেদ এসে বলল,
"এই, দেখ, তুমি আমার এখানে আসার পর থেকে আমার ভাগ্য পুড়েছে, কারণ তোমার তো বউ নেই। বিয়ে করনি। এখন তোমার সামনে দুটি পথ রয়েছে, হয় বিয়ে করবে, নয়তো সরাইখানা ছাড়বে।"
আমি তাকে বললাম,
"দেখ, আমি কীভাবে বিয়ে করব? আমার তো কোন সহায় সম্বল নেই।"
একই সমস্যায় পড়েছিলাম ইস্তামবুলে। তখন আহমেদ ইফেন্দীকে বলেছিলাম, আমার বিয়ে করার মত ইয়ে--- নেই। কিন্তু একথা এখানে বলার সাহস করলাম না। ভাবলাম, এই পাঁজিটা যে চরিত্রের, এটা শুনে আমার প্যান্ট খুলে ন্যাংটা করে আমার কথা যাচাই করা শুরু করে দিবে।
মুরশেদ ইফেন্দী বলল,
"হায় আল্লাহ, তোমার ঈমান তো সাংঘাতিক দুর্বল। তুমি কি কোর'আনে পড় নাই, আল্লাহ বলেছেন, যদি তারা দরিদ্র হয়, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমত দ্বারা ধনী করে দেন।"
আমি একটু থতমত খেলাম। শেষমেষ বললাম,
"ঠিক আছে। আমি বিয়ে করব। তুমি কি আমাকে টাকা দিতে রাজী আছ, অথবা পারবে কি তুমি একটি মেয়ের সন্ধান দিতে যাকে অল্প টাকা দিলেই হয়ে যাবে?"
কিছুক্ষণ নীরবতা। অবশেষে মুরশিদ ইফেন্দী বলল,
'আই ডোন্ট কেয়ার, পারলে রজব মাসে বিয়ে কর, নতুবা সরাইখানা ছাড়"।
রজব মাস আসার আর মাত্র ২৫ দিন বাকী। সম্ভব নয়। চাকরি খুঁজলাম। অবশেষে এক কাঠ মিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে চাকরী পেয়ে সরাইখানাটি ছড়লাম। বেতন ছিল খুবই অল্প। কিন্তু থাকা খাওয়া ছিল মালিকের অধীনে। রজব মাসের আগেই তল্পিতল্পা সহ কাঠ মিস্ত্রীর দোকানে গিয়ে উঠলাম। কাঠ মিস্ত্রীর নাম ছিল আব্দুর রিদা। লোক হিসেবে সে ভাল ছিল। আমাকে ছেলের মত মনে করতো। সে ছিল এক জন শিয়া। ইরানের খোরাসানে তাঁর জন্ম।
যাই হোক, এখানে থাকার সুবাদ আমি ফার্সি ভাষা ভাল করে শেখা শুরু করলাম। প্রতিদিন বিকেলে ইরানী শিয়ারা এখানে এসে জমায়েত হত এবং রাজনীতি ও অর্থনীতি সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনা করত। তবে সরকার এবং ইস্তাম্বুলের খলীফা নিয়ে খুব অল্প কথা বলত। অপরিচিত কেউ আসলে চট করে আলোচনার মোঢ় ঘুরিয়ে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করে দিত।
তারা আমাকে বিশ্বাস করেছিল মনে প্রাণে। কারণ তারা আমাকে আজারবাইজানের লোক হিসেবে মনে করেছিল। আমি তখন তুর্কী ভাষায় কথা বলতাম।
বিভিন্ন সময় একটি যুবক আমাদের দোকানে আসা যাওয়া করতো। যুবকটির মধ্যে ছিল বৈজ্ঞানিক বৈজ্ঞানিক ভাব। সে আরবী, ফার্সি, এবং তুর্কী ভাষা জানতো। লোকটির নাম ছিল, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদী।
চলবে-
ref: https://www.facebook.com/photo.php?fbid=398778460304879&set=a.260763954106331.1073741827.100005181848831&type=1&permPage=1
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন