লা-মাযহাবী, ওয়াহাবীদের প্রতিষ্ঠাতা গুরু মুহাম্মদ বিন আব্দিল ওয়াহাব নজদীর ব্রিটিশ এজেন্ট হওয়ার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনীঃ |
প্রারম্ভিকাঃ
গুপ্তচর হ্যাম্পার একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর। সিরিয়া, ইরাক, ইরান, হিযায এবং ইস্তাম্বুলে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অনৈক্য সৃষ্টিতে ব্রিটিশ সরকার তাকে বিশেষভাবে নিয়োগ দিয়েছিল । এই মিশন চলাকালীন সময় ওয়াহাবী সম্রাট মুহাম্মাদ বিন আব্দিল ওয়াহাব নামক এক লোকের সাথে পরিচয় ঘটেছিল। লোকটার গতিবিধি দেখেই হ্যাম্পার বুঝতে পেরেছিল, এই শিকার ধরতে পারলে মানে একে ব্রিটিশ এজেন্ট বানাতে পারলে আমার মিশন সফল। হ্যাম্পার শিকার বধে সর্বশক্তি নিয়োগ করলো এবং অবশেষে খুব ভালভাবেই সে সফল হলো।
তাহলে ঘটনাটি কী? কী ঘটেছিল?
লামাযহাবীদের শায়েখ তাহলে ব্রিটিশদের এজেন্ট!!!!!!
কীভাবে?
গুপ্তচর নিজেই এ চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছে তার confessions of a British spy Hamper নামক আর্টিকেলে। এখানে আর্টিকেলটির সম্পূর্ণ হুবহু অনুবাদ না করা হলেও প্রাসঙ্গিক মূল বিষয়গুলো যথাযথভাবে তোলে ধরার চেস্টা করা হয়েছে।
জানতে হলে শুধু এক পর্ব পড়লেই হবেনা। সবগুলো পড়তে হবে।
তাই, আমাদের সাথে থাকুন, পড়ুন, শেয়ার করে অন্য ভাইকে জানতে দিন। সিরিয়াস।
----------------
পর্ব এক
__________________________ _______________
গুপ্তচর হেম্পার বলছে,
আমাদের গ্রেট ব্রিটেনের পরিসর হচ্ছে বিশাল। সাগর থেকে সূর্য উদিত হয় আবার সাগরে অস্ত যায়। ইন্ডিয়া, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের বেলায় আমাদের স্টেট নিতান্তই দুর্বল। কারণ এই দেশগুলো এখনও আমাদের পুরো কর্তৃত্বে আসেনি। তো যাই হোক, আমরা কিন্তু এই সব এলাকার জন্য খুবই সফল কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি। শীঘ্রই আমরা এদেরকে আমাদের কব্জায় নিয়ে আসব। আমাদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছেঃ
১-যে এলাকাগুলো আমরা ইতমধ্যে দখল করেছি, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা
২- যেগুলো এখন ও নিয়ন্ত্রণে আসে নি, সেগুলোকে আয়ত্তে নিয়ে আসার চেষ্টা করা।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয় একটি কমিশন করল। আমাকে বিশ্বাস করে ইস্ট ইন্ডিয়ার এডমিনিস্ট্রেটর বানানো হল। বাহ্যত এটি একটি ব্যবসা কম্পানী হলে ও মূলত এর প্রধান কাজ ছিল ভারতকে কব্জা করার কৌশল বের করা। আমাদের সরকার ভারতের ব্যাপারে মোটেও নার্ভাস ছিলনা এজন্য যে এখানকার জনগন বিভিন্ন জাতীয়বাদের, বিভিন্ন ভাষার। তাদের মধ্যে একসাথে বসবাস করার ক্ষেত্রে কন্ট্রাস্ট আছে। মানে এরা ঐক্যবদ্ধ নয়। আমাদের সরকার চীনের ব্যাপারে চিন্তিত নয়, কারণ এদের প্রধান ধর্ম হচ্ছে বুদ্ধিজম এবং কনফুসিয়াজম। এদের কোনটাই হুমকির কারণ নয়। উভয়টি ই মৃত ধর্ম, যাতে জীবনের প্রতি কোন উৎসাহ নেই। সুতরাং এ দুটু দেশের ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই। তারা চিন্তিত ও নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে যে কিছু ঘটবেনা, এটা ও আমরা মনে করতাম না বিধায় আমরা একটি সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলাম।
যেটি আমাদেরকে বেশী ভাবিয়ে তোলেছিল সেটা ছিল, মুসলিম দেশগুলো। ইতোমধ্যে অসুস্থ লোকের সাথে (অটমান এম্পায়ার) আমাদের বেশ কিছু চুক্তি আমাদের সুবিধার দিক বিবেচনায় হয়েছিল। আমাদের মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞ অফিসাররা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, এই সুস্থ লোকটি (অটমান এম্পায়ার) এক শতাব্দীর ভিতরেই মারা যাবে। তাছাড়া আমরা ইরান সরকারের সাথে এমন কিছু গোপন চুক্তি করেছিলাম যা তাদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিতে পারে। কিন্তু এত কিছুর পর ও আমাদের শান্তি ছিলনা, কারণ, আমরা এগুলো থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল পাচ্ছিলাম না। এর পিছনে কতগুলো কারণ ছিল যা আমি নীচে উল্লেখ করছিঃ
কারণগুলো হচ্ছে,
১- মুসলমানরা সাংঘাতিকভাবে ইসলামের প্রতি নিবেদিত প্রাণ। প্রতিটি মুসলমান ইসলামের সাথে শক্তভাবে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে প্রতিটি মুসলমানকে তুলনা করা চলে ঐ সকল প্রিস্টদের মত, যারা খ্রিষ্টান ধর্মের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকে। মারা যাবে তবু ধর্ম ছাড়বে না। বেশী বিপদজনক মুসলিম হচ্ছে ইরানের শিয়ারা। কারন তারা যারা শিয়া নয় তাদেরকে বিধরমী ও ফাউল বলে থাকে। তাদের কাছে খ্রিস্টানরা ক্ষতিকর আবর্জনা ছড়া আর কিছু নয়। আমি একবার এক শিয়া কে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা তোমরা কেন খ্রিস্টানদেরকে এমন মনে কর?
সে জবাব দিল, দেখ, ইসলামের নবী একজন মহান লোক ছিলেন। তিনি খ্রিস্টানদেরকে এক ধরণের আধ্যাত্মিক চাপের মধ্যে রেখেছিলেন যাতে তারা সঠিক পথের দিশা পেতে পারে। মূল বিষয় হল, এটি একজন বিপদজনক লোককে বশে আনার পলিসি ছাড়া কিছু নয়। এখানে যে আবর্জনার কথা বলা হচ্ছে, এটা জাগতিক কোন ব্যাপার নয়। এটি একটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার।এটা শুধু খ্রিস্টানদেরকেই বলা হয় না, বরং এটা সুন্নী এবং সকল অমুসলিমদেরকেও বলা হয়ে থাকে।
আমি তাকে বললাম, ভাল, সুন্নী এবং খ্রিস্টানরা তো আল্লাহ, নবীগণ এবং পরকালকে বিশ্বাস করে, তবুও কেন তোমরা তাদেরকে ফাউল বল?
সে জবাব দিল, এরা ফাউল দুটি কারণেঃ
১- সুন্নীরা আমাদের নবীর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে।
২- খ্রিস্টানরা নবীদের ব্যাপারে অভিযোগ করে, যেমন ঈসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে বলে, যে তিনি মদ খেয়ে মাতাল থাকতেন।
আমি তাকে বললাম, না, খ্রিস্টানরা এ রকম কথা বলে না। লোকটি জবাব দিল, হা, তারা এরকম ই বলে, তুমি বিষয়টি জাননা। এটা বাইবেলে লেখা আছে।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। এ ব্যাপারে আর কথা বাড়াতে চাইলাম না। কারণ সে আমাকে সন্দেহের চোখে দেখতে পারে। তাই তাঁর কথাগুলো এড়িয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম, এদের সাথে ডিবেইট করতে হলে অনেক কৌশলী হতে হবে।
২- ইসলাম একসময় একটি অথরিটেটিভ ধর্ম ছিল। মুসলমানরা অনেক সম্মানিত ছিল। কিন্তু এখন তাদেরকে ইচ্ছা থাকলেও বলা খুবই কঠিন যে, তোমরা যে সম্মান ও মর্যাদা এক সময় অর্জন করেছিলে, সেটা কতক অনুকুল পরিবেশের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। সেই দিন আর এখন নেই। এমন দিন তোমাদের জন্য আর কখনও আসবেন না।
৩। আমরা মুসলিম স্কলারদের ব্যাপারে খুবই আন ইজি অনুভব করি। কারণ এরা ই আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় বাধা। কারণ এরা এমন লোক, যারা তাদের নীতির ব্যাপারে আপোষ করে না। এরা ক্ষণস্থায়ী ভোগ বিলাস থেকে বিমুখ এবং কুর'আন কারীমে বর্ণিত বেহেশ্তের প্রতি উন্মুখ। লোক জন তাদেরকে অনুসরন করে। এমন কি বাদশাহ পর্যন্ত তাদেরকে ভয় পায়। সুন্নীরা অবশ্য এত কট্টর নয় যেমন শিয়ারা। কারণ শিয়া লোকজন বই পড়েনা। তারা তাদের স্কলারদেরকে শুধু আনুসরন করে প্রতিটি বিষয়ে।
এ সকল বিষয়কে সামনে রেখে আমরা বিভিন্ন কনফারেন্স এর নিয়মিত আয়োজন করলাম।
আমরা এ ব্যাপারে সিরিজ কনফারেন্সের প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু প্রতিবারই শুধু হতাশা আর হতাশা। পথ যেন আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে ই আছে। প্রতিটি গোয়েন্দা রিপোর্টে শুধু ই ফ্রাশটেইশন। কিন্তু আমরা হাল ছাড়লাম না। আমরা এমন ধরণের লোক যারা ধৈর্য ধরে গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার অভ্যাস ডেভেলাপ করেছিলাম।
মিনিস্টার স্বয়ং এবং আরও কিছু স্পেশালিষ্ট আমাদের কনফারেন্সে উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা মোট ২০ জন ছিলাম। ৩ ঘন্টা ব্যাপী আলোচনা চলল। না , কোন ফলাফল নেই। সিদ্ধান্ত ছাড়াই কনফারেন্সের ইতি টানা হল।
তবু একজন প্রিস্ট বললেন। চিন্তার কোন কারণ নেই। মাসায়াহ অজানা জগত থেকে আমাদের উপর তাঁর একটি চোখ সব সময় রাখবেন। আমাদের যা করতে হবে, তা হল, আমাদের নিজেদেরকে শক্তিশালী করতে হবে, মোড়লগিরি ধরে রাখতে হলে মিডিয়া কন্ট্রল করতে হবে। সম্ভাব্য সকল মেথড ফলো করতে হবে। মুসলমানদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করতে হবে।
আরেকটি কনফারেন্স।
ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং রাশিয়া - এ তিনটি দেশ থেকে বিভিন্ন ডিপ্লমেট এবং ধর্মীয় ব্যক্ত্ববর্গ এ কনফারেন্সে উপস্থিত হলেন। আমার ভাগ্য ভাল ছিল। আমিও এ কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলাম, কারন আমার সাথে মন্ত্রীর ভাল সম্পর্ক ছিল। এ কনফারেন্সে আলোচনা হল কীভাবে মুসনমানদের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরী করা যায় এবং তাদেরকে কীভাবে খ্রিষ্টান বানানো যায়। কিন্তু এ কনফারেন্সে ও প্রত্যাশা মোতাবেক ফলাফল আসলনা। আর হাঁ,এ কনফারেন্সে কী কী আলোচনা হয়েছিল তা আমি আমার গ্রন্থ "Ilaa Melekoot-il-Meseeh." এর মধ্যে লিপিবদ্ধ করেছি।
একটি বৃক্ষকে উপড়ে ফেলা, যার শিকড় পৃথিবীর গভীরে চলে গেছে- এটা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু আমরা এটাকে অবশ্যই পানিভাত করে ফেলব। খ্রিষ্টান ধর্ম এসেছে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে, আমাদের লর্ড জীসাস আমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন। ভাবনার বিষয় ছিল যে, ইস্ট এবং ওয়েস্ট মুহাম্মাদকে সহায়তা করেছিল।এখন আর এটা নেই। সখ্যতা দূর হয়ে যাচ্ছে। আমরা আনন্দের সাথে লক্ষ্য করেছি, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ রূপে বদলে গেছে। আমাদের মিনিস্ট্রির আপ্রাণ প্রচেস্টায় এবং অন্যান্য খ্রিষ্টান সরকারের প্রচেস্টায় মুসলমানরা এখন ধংসের পথে। আর খ্রিষ্টান ধর্মের হচ্ছে প্রতিনিয়ত উত্তরণ। এখন আমাদের সময় এসেছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী আমরা যে সকল এলাকা হারিয়েছিলাম, সেগুলোর উপর পুণঃনিয়ন্ত্রণ করা।
১৭১০ সালে উপনিবেশবাদের মন্ত্রণালয় আমাকে মিশর, ইরাক, হিজাজ এবং ইস্তাম্বুল পাঠাল। আমি গুপ্তচরগিরী করব এ উদ্দেশ্যে। আমার কাজ ছিল, মুসলমানদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার প্রয়োজনীয় তথ্য উপাথ্য সংগ্রহ করা। আমি ছাড়াও আরও ৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হল। এক ই কাজে, এক ই সময়ে। আর মিশন সফল করতে আমাদেরকে বিশেষ বিশেষ কিছু নামের তালিকা প্রদান করা হল।
আমি সেক্রেটারী জেনারেলকে নিশ্চিন্ত করলাম, "আই উইল নেভার ফরগেট।"
তিনি বললেন, জেনে রাখ, "আমাদের ভবিষ্যৎ সফলতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে তোমাদের উপর।"
আমি প্রথম মনস্থ করলাম, ইস্তাম্বুল যাব। মুসলমানদের ঐতিহ্যের একটি প্রাণকেন্দ্র। আর আমাকে সে জন্য তুর্কী ভাষা শিখতে হয়েছিল। আমি লন্ডনে থাকা কালীন সময়ে টারকিশ, এরাবিক, ফার্সি, ভাষা শিখে ফেলেছিলাম। যদিও পুথিগত শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষা থেকে ভিন্ন। আর সে জন্য আমি বিশেষ করে ইস্তাম্বুলের আঞ্চলিক ভাষা ও রপ্ত করেছিলাম, যাতে লোকজন আমাকে সন্দেহ করতে না পারে।
আমি কখন ও এ সন্দেহ করতাম না যে তারা আমাকে সন্দেহ করবে। কারন, আমি জানি, মুসলমানরা খুব ই উদার প্রকৃতির এবং পরোপকারী। এটা তারা তাদের নবীর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছিল। তারা আমাদের ন্যায় সন্দেহপ্রবণ নয়। তাছাড়া ঐ সময় তুর্কী সরকারের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা বিষয়ক কোন অরগেনাইজেশন ও ছিলনা।
চলবে-
গুপ্তচর হ্যাম্পার একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর। সিরিয়া, ইরাক, ইরান, হিযায এবং ইস্তাম্বুলে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অনৈক্য সৃষ্টিতে ব্রিটিশ সরকার তাকে বিশেষভাবে নিয়োগ দিয়েছিল । এই মিশন চলাকালীন সময় ওয়াহাবী সম্রাট মুহাম্মাদ বিন আব্দিল ওয়াহাব নামক এক লোকের সাথে পরিচয় ঘটেছিল। লোকটার গতিবিধি দেখেই হ্যাম্পার বুঝতে পেরেছিল, এই শিকার ধরতে পারলে মানে একে ব্রিটিশ এজেন্ট বানাতে পারলে আমার মিশন সফল। হ্যাম্পার শিকার বধে সর্বশক্তি নিয়োগ করলো এবং অবশেষে খুব ভালভাবেই সে সফল হলো।
তাহলে ঘটনাটি কী? কী ঘটেছিল?
লামাযহাবীদের শায়েখ তাহলে ব্রিটিশদের এজেন্ট!!!!!!
কীভাবে?
গুপ্তচর নিজেই এ চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছে তার confessions of a British spy Hamper নামক আর্টিকেলে। এখানে আর্টিকেলটির সম্পূর্ণ হুবহু অনুবাদ না করা হলেও প্রাসঙ্গিক মূল বিষয়গুলো যথাযথভাবে তোলে ধরার চেস্টা করা হয়েছে।
জানতে হলে শুধু এক পর্ব পড়লেই হবেনা। সবগুলো পড়তে হবে।
তাই, আমাদের সাথে থাকুন, পড়ুন, শেয়ার করে অন্য ভাইকে জানতে দিন। সিরিয়াস।
----------------
পর্ব এক
__________________________
গুপ্তচর হেম্পার বলছে,
আমাদের গ্রেট ব্রিটেনের পরিসর হচ্ছে বিশাল। সাগর থেকে সূর্য উদিত হয় আবার সাগরে অস্ত যায়। ইন্ডিয়া, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের বেলায় আমাদের স্টেট নিতান্তই দুর্বল। কারণ এই দেশগুলো এখনও আমাদের পুরো কর্তৃত্বে আসেনি। তো যাই হোক, আমরা কিন্তু এই সব এলাকার জন্য খুবই সফল কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি। শীঘ্রই আমরা এদেরকে আমাদের কব্জায় নিয়ে আসব। আমাদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছেঃ
১-যে এলাকাগুলো আমরা ইতমধ্যে দখল করেছি, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা
২- যেগুলো এখন ও নিয়ন্ত্রণে আসে নি, সেগুলোকে আয়ত্তে নিয়ে আসার চেষ্টা করা।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয় একটি কমিশন করল। আমাকে বিশ্বাস করে ইস্ট ইন্ডিয়ার এডমিনিস্ট্রেটর বানানো হল। বাহ্যত এটি একটি ব্যবসা কম্পানী হলে ও মূলত এর প্রধান কাজ ছিল ভারতকে কব্জা করার কৌশল বের করা। আমাদের সরকার ভারতের ব্যাপারে মোটেও নার্ভাস ছিলনা এজন্য যে এখানকার জনগন বিভিন্ন জাতীয়বাদের, বিভিন্ন ভাষার। তাদের মধ্যে একসাথে বসবাস করার ক্ষেত্রে কন্ট্রাস্ট আছে। মানে এরা ঐক্যবদ্ধ নয়। আমাদের সরকার চীনের ব্যাপারে চিন্তিত নয়, কারণ এদের প্রধান ধর্ম হচ্ছে বুদ্ধিজম এবং কনফুসিয়াজম। এদের কোনটাই হুমকির কারণ নয়। উভয়টি ই মৃত ধর্ম, যাতে জীবনের প্রতি কোন উৎসাহ নেই। সুতরাং এ দুটু দেশের ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই। তারা চিন্তিত ও নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে যে কিছু ঘটবেনা, এটা ও আমরা মনে করতাম না বিধায় আমরা একটি সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলাম।
যেটি আমাদেরকে বেশী ভাবিয়ে তোলেছিল সেটা ছিল, মুসলিম দেশগুলো। ইতোমধ্যে অসুস্থ লোকের সাথে (অটমান এম্পায়ার) আমাদের বেশ কিছু চুক্তি আমাদের সুবিধার দিক বিবেচনায় হয়েছিল। আমাদের মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞ অফিসাররা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, এই সুস্থ লোকটি (অটমান এম্পায়ার) এক শতাব্দীর ভিতরেই মারা যাবে। তাছাড়া আমরা ইরান সরকারের সাথে এমন কিছু গোপন চুক্তি করেছিলাম যা তাদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিতে পারে। কিন্তু এত কিছুর পর ও আমাদের শান্তি ছিলনা, কারণ, আমরা এগুলো থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল পাচ্ছিলাম না। এর পিছনে কতগুলো কারণ ছিল যা আমি নীচে উল্লেখ করছিঃ
কারণগুলো হচ্ছে,
১- মুসলমানরা সাংঘাতিকভাবে ইসলামের প্রতি নিবেদিত প্রাণ। প্রতিটি মুসলমান ইসলামের সাথে শক্তভাবে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে প্রতিটি মুসলমানকে তুলনা করা চলে ঐ সকল প্রিস্টদের মত, যারা খ্রিষ্টান ধর্মের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকে। মারা যাবে তবু ধর্ম ছাড়বে না। বেশী বিপদজনক মুসলিম হচ্ছে ইরানের শিয়ারা। কারন তারা যারা শিয়া নয় তাদেরকে বিধরমী ও ফাউল বলে থাকে। তাদের কাছে খ্রিস্টানরা ক্ষতিকর আবর্জনা ছড়া আর কিছু নয়। আমি একবার এক শিয়া কে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা তোমরা কেন খ্রিস্টানদেরকে এমন মনে কর?
সে জবাব দিল, দেখ, ইসলামের নবী একজন মহান লোক ছিলেন। তিনি খ্রিস্টানদেরকে এক ধরণের আধ্যাত্মিক চাপের মধ্যে রেখেছিলেন যাতে তারা সঠিক পথের দিশা পেতে পারে। মূল বিষয় হল, এটি একজন বিপদজনক লোককে বশে আনার পলিসি ছাড়া কিছু নয়। এখানে যে আবর্জনার কথা বলা হচ্ছে, এটা জাগতিক কোন ব্যাপার নয়। এটি একটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার।এটা শুধু খ্রিস্টানদেরকেই বলা হয় না, বরং এটা সুন্নী এবং সকল অমুসলিমদেরকেও বলা হয়ে থাকে।
আমি তাকে বললাম, ভাল, সুন্নী এবং খ্রিস্টানরা তো আল্লাহ, নবীগণ এবং পরকালকে বিশ্বাস করে, তবুও কেন তোমরা তাদেরকে ফাউল বল?
সে জবাব দিল, এরা ফাউল দুটি কারণেঃ
১- সুন্নীরা আমাদের নবীর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে।
২- খ্রিস্টানরা নবীদের ব্যাপারে অভিযোগ করে, যেমন ঈসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে বলে, যে তিনি মদ খেয়ে মাতাল থাকতেন।
আমি তাকে বললাম, না, খ্রিস্টানরা এ রকম কথা বলে না। লোকটি জবাব দিল, হা, তারা এরকম ই বলে, তুমি বিষয়টি জাননা। এটা বাইবেলে লেখা আছে।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। এ ব্যাপারে আর কথা বাড়াতে চাইলাম না। কারণ সে আমাকে সন্দেহের চোখে দেখতে পারে। তাই তাঁর কথাগুলো এড়িয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম, এদের সাথে ডিবেইট করতে হলে অনেক কৌশলী হতে হবে।
২- ইসলাম একসময় একটি অথরিটেটিভ ধর্ম ছিল। মুসলমানরা অনেক সম্মানিত ছিল। কিন্তু এখন তাদেরকে ইচ্ছা থাকলেও বলা খুবই কঠিন যে, তোমরা যে সম্মান ও মর্যাদা এক সময় অর্জন করেছিলে, সেটা কতক অনুকুল পরিবেশের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। সেই দিন আর এখন নেই। এমন দিন তোমাদের জন্য আর কখনও আসবেন না।
৩। আমরা মুসলিম স্কলারদের ব্যাপারে খুবই আন ইজি অনুভব করি। কারণ এরা ই আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় বাধা। কারণ এরা এমন লোক, যারা তাদের নীতির ব্যাপারে আপোষ করে না। এরা ক্ষণস্থায়ী ভোগ বিলাস থেকে বিমুখ এবং কুর'আন কারীমে বর্ণিত বেহেশ্তের প্রতি উন্মুখ। লোক জন তাদেরকে অনুসরন করে। এমন কি বাদশাহ পর্যন্ত তাদেরকে ভয় পায়। সুন্নীরা অবশ্য এত কট্টর নয় যেমন শিয়ারা। কারণ শিয়া লোকজন বই পড়েনা। তারা তাদের স্কলারদেরকে শুধু আনুসরন করে প্রতিটি বিষয়ে।
এ সকল বিষয়কে সামনে রেখে আমরা বিভিন্ন কনফারেন্স এর নিয়মিত আয়োজন করলাম।
আমরা এ ব্যাপারে সিরিজ কনফারেন্সের প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু প্রতিবারই শুধু হতাশা আর হতাশা। পথ যেন আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে ই আছে। প্রতিটি গোয়েন্দা রিপোর্টে শুধু ই ফ্রাশটেইশন। কিন্তু আমরা হাল ছাড়লাম না। আমরা এমন ধরণের লোক যারা ধৈর্য ধরে গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার অভ্যাস ডেভেলাপ করেছিলাম।
মিনিস্টার স্বয়ং এবং আরও কিছু স্পেশালিষ্ট আমাদের কনফারেন্সে উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা মোট ২০ জন ছিলাম। ৩ ঘন্টা ব্যাপী আলোচনা চলল। না , কোন ফলাফল নেই। সিদ্ধান্ত ছাড়াই কনফারেন্সের ইতি টানা হল।
তবু একজন প্রিস্ট বললেন। চিন্তার কোন কারণ নেই। মাসায়াহ অজানা জগত থেকে আমাদের উপর তাঁর একটি চোখ সব সময় রাখবেন। আমাদের যা করতে হবে, তা হল, আমাদের নিজেদেরকে শক্তিশালী করতে হবে, মোড়লগিরি ধরে রাখতে হলে মিডিয়া কন্ট্রল করতে হবে। সম্ভাব্য সকল মেথড ফলো করতে হবে। মুসলমানদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করতে হবে।
আরেকটি কনফারেন্স।
ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং রাশিয়া - এ তিনটি দেশ থেকে বিভিন্ন ডিপ্লমেট এবং ধর্মীয় ব্যক্ত্ববর্গ এ কনফারেন্সে উপস্থিত হলেন। আমার ভাগ্য ভাল ছিল। আমিও এ কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলাম, কারন আমার সাথে মন্ত্রীর ভাল সম্পর্ক ছিল। এ কনফারেন্সে আলোচনা হল কীভাবে মুসনমানদের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরী করা যায় এবং তাদেরকে কীভাবে খ্রিষ্টান বানানো যায়। কিন্তু এ কনফারেন্সে ও প্রত্যাশা মোতাবেক ফলাফল আসলনা। আর হাঁ,এ কনফারেন্সে কী কী আলোচনা হয়েছিল তা আমি আমার গ্রন্থ "Ilaa Melekoot-il-Meseeh." এর মধ্যে লিপিবদ্ধ করেছি।
একটি বৃক্ষকে উপড়ে ফেলা, যার শিকড় পৃথিবীর গভীরে চলে গেছে- এটা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু আমরা এটাকে অবশ্যই পানিভাত করে ফেলব। খ্রিষ্টান ধর্ম এসেছে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে, আমাদের লর্ড জীসাস আমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন। ভাবনার বিষয় ছিল যে, ইস্ট এবং ওয়েস্ট মুহাম্মাদকে সহায়তা করেছিল।এখন আর এটা নেই। সখ্যতা দূর হয়ে যাচ্ছে। আমরা আনন্দের সাথে লক্ষ্য করেছি, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ রূপে বদলে গেছে। আমাদের মিনিস্ট্রির আপ্রাণ প্রচেস্টায় এবং অন্যান্য খ্রিষ্টান সরকারের প্রচেস্টায় মুসলমানরা এখন ধংসের পথে। আর খ্রিষ্টান ধর্মের হচ্ছে প্রতিনিয়ত উত্তরণ। এখন আমাদের সময় এসেছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী আমরা যে সকল এলাকা হারিয়েছিলাম, সেগুলোর উপর পুণঃনিয়ন্ত্রণ করা।
১৭১০ সালে উপনিবেশবাদের মন্ত্রণালয় আমাকে মিশর, ইরাক, হিজাজ এবং ইস্তাম্বুল পাঠাল। আমি গুপ্তচরগিরী করব এ উদ্দেশ্যে। আমার কাজ ছিল, মুসলমানদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার প্রয়োজনীয় তথ্য উপাথ্য সংগ্রহ করা। আমি ছাড়াও আরও ৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হল। এক ই কাজে, এক ই সময়ে। আর মিশন সফল করতে আমাদেরকে বিশেষ বিশেষ কিছু নামের তালিকা প্রদান করা হল।
আমি সেক্রেটারী জেনারেলকে নিশ্চিন্ত করলাম, "আই উইল নেভার ফরগেট।"
তিনি বললেন, জেনে রাখ, "আমাদের ভবিষ্যৎ সফলতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে তোমাদের উপর।"
আমি প্রথম মনস্থ করলাম, ইস্তাম্বুল যাব। মুসলমানদের ঐতিহ্যের একটি প্রাণকেন্দ্র। আর আমাকে সে জন্য তুর্কী ভাষা শিখতে হয়েছিল। আমি লন্ডনে থাকা কালীন সময়ে টারকিশ, এরাবিক, ফার্সি, ভাষা শিখে ফেলেছিলাম। যদিও পুথিগত শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষা থেকে ভিন্ন। আর সে জন্য আমি বিশেষ করে ইস্তাম্বুলের আঞ্চলিক ভাষা ও রপ্ত করেছিলাম, যাতে লোকজন আমাকে সন্দেহ করতে না পারে।
আমি কখন ও এ সন্দেহ করতাম না যে তারা আমাকে সন্দেহ করবে। কারন, আমি জানি, মুসলমানরা খুব ই উদার প্রকৃতির এবং পরোপকারী। এটা তারা তাদের নবীর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছিল। তারা আমাদের ন্যায় সন্দেহপ্রবণ নয়। তাছাড়া ঐ সময় তুর্কী সরকারের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা বিষয়ক কোন অরগেনাইজেশন ও ছিলনা।
চলবে-
__________________________
(সম্পূর্ণ কাহিনী জানতে হলে প্রতিটি পর্ব পড়তে হবে। তাই অনুগ্রহপূর্বক সাথে থাকুন।)
ref: https://www.facebook.com/photo.php?fbid=398287697020622&set=a.260763954106331.1073741827.100005181848831&type=1
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন