শনিবার, ৩০ মে, ২০১৫

সৌদি রাজপরিবারের ইতিহাস

সৌদি আরব হলো কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর একমাত্র মুসলিম দেশ। অন্য কোনো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

রিয়াদের নিকটস্থ দিরিয়া নামের একটি কৃষিবসতির প্রধান ছিলেন মুহাম্মদ বিন সৌদ। এই উচ্চাভিলাষী মরুযোদ্ধা ১৭৪৪ সালে আরবের বিখ্যাত ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ বিন ওয়াহাব [ওয়াহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা]-এর সাথে মৈত্রী চুক্তি করে “দিরিয়া আমিরাত” গঠন করেন। তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে শিরক-বিদাত পালনের অভিযোগে এই দুজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। ওই “দিরিয়া আমিরাত”-ই বিশ্বের প্রথম সৌদি রাজ্য/আমিরাত। মুহাম্মদ বিন সৌদ তার পুত্র আবদুল আজিজের সাথে মুহাম্মদ বিন ওয়াহাবের মেয়ের বিয়ে দেন। এভাবেই সৌদ পরিবার ও ওয়াহাবী মতবাদের মিলনযাত্রা শুরু হয়। ১৭৬৫ সালে মুহাম্মদ বিন সৌদ-এর মৃত্যু হলে তার ছেলে আবদুল আজিজ দিরিয়ায় ক্ষমতাসীন হয়।

এই আবদুল আজিজ তত্কালীন বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল ব্রিটেনের সাথে হাত মিলিয়ে তুরস্কের খলিফাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে থাকে। শ্বশুর ইবনে ওয়াহাবের ধর্মীয় মতবাদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তথাকথিত শিরক-বিদাত উচ্ছেদের নামে ব্রিটিশদের সাথে তুর্কি খিলাফত ধ্বংসের কাজে লিপ্ত হয় আবদুল আজিজ। ১৭৯২ সালে মুহাম্মদ বিন ওয়াহাবের মৃত্যু হয়। ১৮০১/২ সালে আবদুল আজিজ তুর্কি খিলাফতের কাছ থেকে ইরাক দখল করে হজরত আলী (রা.) ও হজরত হুসেন (রা.)-এর মাজার শরিফ ভেঙে ফেলে। এর প্রেক্ষিতে ১৮০৩ সালে একজন শিয়া মুসলিম আজিজকে দিরিয়ায় আসরের নামাজরত অবস্থায় হত্যা করে। 

এর পর আবদুল আজিজের ছেলে সৌদ বিন আবদুল আজিজ ক্ষমতায় এসে তুর্কিদের পরাজিত করে ১৮০৩ সালে মক্কা ও ১৮০৪ সালে মদিনা দখল করে নেয়। দুই পবিত্র নগরী দখল করে তারা ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়। তারা মক্কা-মদিনার বহু মুসলিমকে হত্যা করে। সবই করা হয় সেই শিরক-বিদাত উচ্ছেদের নামে! ওয়াহাবী মতবাদের ধর্মীয় শুদ্ধি অভিযানের অজুহাতে তারা বহু সাহাবীর কবরস্থান ধ্বংস করে। এমনকি খোদ মহানবী (সা.)-এর পবিত্র কবরে ছায়াদানকারী মিম্বরগুলোও এরা ভেঙে ফেলে! মহানবী (সা.)-এর পবিত্র রওজাকে তুর্কি খলিফারা যেসব মণি-মুক্তায় সাজিয়েছিলেন, শুদ্ধি অভিযানের নামে সেসবও তুলে ফেলে সৌদ-এর বাহিনী। এসবই চলে ব্রিটিশদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা নিয়ে।

ইরাক-মক্কা-মদিনায় সৌদিদের এই ধ্বংসযজ্ঞে তত্কালীন তুর্কি খলিফাগণ ভীষণ রুষ্ট হন। ১৮০৮ সালে খলিফা ২য় মাহমুদ ক্ষমতাসীন হয়ে সৌদিদের দমনে শক্তিশালী সেনাদল পাঠান। ব্রিটিশ বাবারা এবার আর সৌদিদের বাঁচাতে পারেনি। ১৮১৮ সালে সৌদের ছেলে, তত্কালীন সৌদি শাসক আবদুল্লাহ বিন সৌদ তুর্কিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
আবদুল্লাহ বিন সৌদকে বন্দী করে ইস্তাম্বুলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই পবিত্র নগরী ও বহু মসজিদ ধ্বংসের শাস্তি হিসেবে খলিফা ২য় মাহমুদ-এর নির্দেশে আবদুল্লাহ বিন সৌদ ও তার দুই ছেলেকে ইস্তাম্বুলে প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ করা হয়।
খলিফা ২য় মাহমুদ
 
এভাবেই প্রথম সৌদি আমিরাত (১৭৪৪-১৮১৮)-এর পতন হয় ও পবিত্র মক্কা-মদিনাসহ আরবে উসমানিয়া খিলাফতের শাসনকর্তৃত্ব ফিরে আসে।
সৌদ পরিবারের দিরিয়ার আখড়া ১৮১৮ সালে ধ্বংস হয়ে গেলে প্রথম সৌদি আমিরাতের শেষ আমীর আবদুল্লাহর তুর্কি নামের এক পুত্র মরুভূমিতে পালিয়ে যায়। এই তুর্কি বিন আবদুল্লাহ পালিয়ে বনু তামিম গোত্রে আশ্রয় নেয়। পরে ১৮২১ সালে সে আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এসে উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
১৮২৪ সালে তুর্কি বিন আবদুল্লাহ উসমানিয়াদের নিয়োজিত মিশরীয়দের হটিয়ে দিরিয়া ও রিয়াদ দখল করে নেয়। রিয়াদকে রাজধানী করে গঠিত এই “নজদ আমিরাত” ইতিহাসে দ্বিতীয় সৌদি রাজ্য নামে পরিচিত। দ্বিতীয় সৌদি রাজ্যটি অবশ্য খুব কম এলাকাই দখলে নিতে পেরেছিল। এটি বেশিদিন টিকেওনি। এই নজদ আমিরাতের প্রধানকে “ইমাম” বলা হত এবং ওয়াহাবী মতাবলম্বীরাই ধর্মীয় বিষয়ে কর্তৃত্বশীল ছিল।

তবে এবার সৌদ পরিবারে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কথিত ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহকে তাঁর এক জ্ঞাতি ভাই মুশারি বিন আবদুর রহমান বিদ্রোহ করে ১৮৩৪ সালে হত্যা করে। তবে ক্ষমতা পায়নি মুশারি। তুর্কির ছেলে ফয়সাল এরপর নজদ আমিরাতের ইমাম হয়।

সৌদ পরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে। অবশেষে ১৮৯১ সালে মুলায়দার যুদ্ধে উসমানিয়াদের অনুগত রাশিদী বাহিনীর হাতে দ্বিতীয় সৌদি আমিরাতের পতন ঘটে। সৌদিদের শেষ ইমাম আবদুর রহমান বিন ফয়সাল তার সাঙ্গোপাঙ্গসহ পালিয়ে যায়।
আবদুর রহমান বিন ফয়সাল
 
বিশাল বালুকাময় রুব আল খালি মরুভূমি পাড়ি দিয়ে আবদুর রহমান তার পুত্র আবদুল আজিজকে [একে মনে রাখুন – পরবর্তী গাদ্দার] নিয়ে দক্ষিণপূর্বে মুররা বেদুইন গোত্রে গিয়ে পালায়। সেখান থেকে তারা বাহরাইনের রাজপরিবারের কাছে গিয়ে কিছুদিন আশ্রয় নেয়। তার পর ১৮৯৩ সালে আবদুর রহমান ও তার পুত্র শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ দালাল কুয়েতি আল-সাবাহ রাজপরিবারের আশ্রয় পায়।

কুয়েতি রাজপরিবারের সহায়তায় সৌদিরা উসমানিয়া খিলাফতের কর্তৃত্বাধীন নজদে একের পর এক চোরাগুপ্তা হামলা চালাতে থাকে। ওয়াহাবী মতবাদের আলোকে পরিশুদ্ধ ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে এসব হামলা চলতে থাকে। কিন্তু এসব হামলায় সৌদিরা তেমন কোনো বড় সাফল্য পায়নি। ১৯০১ সালে সারিফের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে আবদুর রহমান তার হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের সব উদ্যম হারায়।

১৮৯৯ সালের জানুয়ারিতে কুয়েতের আমির মুবারক আল সাবাহ ব্রিটেনের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে কুয়েতকে ব্রিটেনের করদরাজ্য (Protectorate)-এ পরিণত করেন। তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের প্রভাবের বিরুদ্ধেই কুয়েত এই চুক্তি করে ব্রিটেনের সাথে।

সৌদ পরিবারের লড়াইটিও ছিল উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধেই। তাই ১৯০১ সালে সারিফের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে পিতা আবদুর রহমান হতোদ্যম হলেও পুত্র আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ আবারও আশার আলো দেখে। আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ১৯০১ সালের শেষের দিকে কুয়েতের আমির মুবারকের কাছে উসমানিয়াদের নিয়ন্ত্রিত রিয়াদ আক্রমণের জন্য সাহায্য চায়। ব্রিটিশ মদদপুষ্ট কুয়েত সানন্দে ইবনে সৌদকে ঘোড়া ও অস্ত্র সরবরাহ করে।

আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ – বর্তমান সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা
 
১৯০২ সালের ১৩ জানুয়ারি ইবনে সৌদ সৈন্যসহ রিয়াদের মাসমাক দুর্গ আক্রমণ করে। মাসমাকের উসমানিয়া অনুগত রাশিদী প্রশাসক ইবনে আজলানকে হত্যা করে সৌদিরা। ইবনে সৌদ যুদ্ধজয় শেষে ইবনে আজলানের ছিন্নমস্তকটি নিয়ে দুর্গশীর্ষে আসে এবং নিচে সমবেত উদ্বিগ্ন রিয়াদবাসীর দিকে ছুঁড়ে মারে।
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের রিয়াদ আমিরাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাসে তৃতীয় সৌদি রাজ্যের সূচনা হয়।
এর পর সৌদিরা একে একে রাশিদীদের নজদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হটিয়ে দিতে থাকে। ১৯০৭ সালের মধ্যে সৌদিরা নজদের বিরাট এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়।
১৯০৯ সালে ব্রিটিশরা সামরিক অফিসার William Henry Irvine Shakespear-কে কুয়েতে নিয়োগ দিলে সৌদ পরিবার আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। শেক্সপিয়ারকে ইবনে সৌদ সামরিক উপদেষ্টা বানিয়ে নেয়।
William Henry Irvine Shakespear
১৯১৩ সালে সৌদিরা উসমানিয়া সৈন্যদের কাছ থেকে পূর্ব আরবের গুরুত্বপূর্ণ মরুদ্যান হাসা শহর দখল করে নেয়। এর পর পার্শ্ববর্তী কাতিফ শহরও সৌদিরা দখলে নেয়।
পরের বছর ১৯১৪ সালে বিশ্বজুড়ে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ব্রিটেন-ফ্রান্স-রাশিয়ার মিত্রশক্তি জার্মানি-উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। রিয়াদে ব্রিটিশরা শেক্সপিয়ারের মাধ্যমে সৌদিদের সাথে উসমানিয়া অনুগত রাশিদীদের যুদ্ধ লাগায়।
১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে সংঘটিত এই যুদ্ধে রাশিদীরা জয়ী হয় ও শেক্সপিয়ারকে হত্যা করে। রাশিদীরা শেক্সপিয়ারের শিরশ্ছেদ করে ও তার হেলমেট উসমানিয়াদের কাছে হস্তান্তর করে। উসমানিয়ারা সৌদিদের সাথে ব্রিটিশদের সম্পর্কের প্রমাণস্বরূপ শেক্সপিয়ারের হেলমেট মদিনার প্রধান ফটকে ঝুলিয়ে দেখায়।
শেক্সপিয়ারকে হারিয়ে বিপর্যস্ত ইবনে সৌদ ১৯১৫ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশদের সাথে দারিন চুক্তি স্বাক্ষর করে। ব্রিটিশদের পক্ষে ব্রিটেনের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান মেজর জেনারেল স্যার পার্সি কক্স ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি মোতাবেক সৌদি রাজত্ব ব্রিটিশদের করদরাজ্য (Protectorate)-এ পরিণত হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন-ফ্রান্স-রাশিয়ার মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে জার্মান-উসমানিয়া খিলাফতের দুর্বল অবস্থা ও আল-সৌদ পরিবারের সাথে ব্রিটিশদের সখ্য দেখে চিন্তিত হয়ে ওঠেন মক্কার উসমানিয়া সমর্থিত শাসক হুসাইন বিন আলী।
হুসাইন বিন আলী
১৯১৫ সালের ১৪ জুলাই থেকে হুসাইন মিশরের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার হেনরি ম্যাকম্যাহনের গোপনে পত্র যোগাযোগ শুরু করেন। ৩০ জানুয়ারি ১৯১৬ পর্যন্ত এই পত্র আদান-প্রদান চলতে থাকে। উসমানিয়া খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত বিশাল আরব ভূ-খণ্ডের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা মতবিনিময় করে।
ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মদদে মক্কার শাসক সেই হুসাইন বিন আলী উসমানিয়াদের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহ তৈরি করে। ব্রিটিশ সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্সের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় বিশ্বাসঘাতক হুসাইন মিডল-ইস্টার্ন ফ্রন্টে উসমানিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শুরু করলে বহু উসমানিয়া সৈন্য বন্দী হয় ও অবশেষে উসমানিয়ারা ১ম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হয়।
ব্রিটিশ সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্স – আরববিশ্বে আরব জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা – হলিউডের বিখ্যাত “Lawrence of Arabia” (১৯৬২) মুভিটি একে নিয়েই নির্মিত
১৩০০ বছর পর মধ্যপ্রাচ্য মুসলিম খিলাফতের হাতছাড়া হয়ে যায়।
পুরস্কার হিসেবে ব্রিটিশরা ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর হুসাইন বিন আলীর দ্বিতীয় ছেলে আব্দুল্লাহকে জর্ডানের রাজত্ব ও তৃতীয় ছেলে ফয়সালকে ইরাকের রাজত্ব দেয়। হুসাইনকে রাখা হয় হেজাজ (পবিত্র মক্কা-মদিনা ও তাবুক অঞ্চল)-এর শাসক হিসেবে।

এভাবে ১ম বিশ্বযুদ্ধ আল-সৌদ পরিবারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলে। কেননা ব্রিটিশদের পা-চাটার ক্ষেত্রে তাদের প্রতিপক্ষ হুসাইন পরিবার এগিয়ে যায় এবং যুদ্ধ শেষে হুসাইন ও তার দুই ছেলে মিলে তিন দেশের রাজত্ব পায়। তবে নজদ (রিয়াদ ও তদসংলগ্ন অঞ্চল)-এর শাসক সৌদিরাই থেকে যায়।

দারিন চুক্তির আওতায় আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ব্রিটিশদের কাছ থেকে বহু অস্ত্র ও মাসে ৫,০০০ পাউন্ড ভাতা (দালালির পুরস্কার) পেতে থাকে।

তথ্যসূত্র: Abdullah Mohammad Sindi, “The Direct Instruments of Western Control over the Arabs: The Shining Example of the House of Saud”

যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা ইবনে সৌদকে ১ম বিশ্বযুদ্ধের উদ্বৃত্ত বিপুল গোলাবারুদ দিয়ে দেয়। ওই ব্রিটিশ অস্ত্র ও গোলাবারুদের সম্ভার নিয়ে সৌদিরা ক্রমধ্বংসমান উসমানিয়া খিলাফতের অনুগত রাশিদীদের ওপর দক্ষিণ-পশ্চিম আরব অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করে। ১৯২০ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত লড়ে রাশিদীরা শেষ পর্যন্ত সৌদিদের হাতে পুরোপুরি পরাজিত হয়। ফলে আরবে আল-সৌদ পরিবার নিয়ন্ত্রিত ভূ-খণ্ডের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত Percy Cox-এর মধ্যস্থতায় ১৯২২ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত Uqair Protocol-এর আওতায় ওই বিশাল অঞ্চলে সৌদি রাজত্ব স্বীকৃতি লাভ করে।

এ-সময় পর্যন্ত আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ কখনোই ব্রিটিশ অনুগত হেজাজের শাসক হুসাইনের সাথে সংঘাতে জড়ায়নি।
১৯২৪ সালের ৩ মার্চ আরেক ব্রিটিশ দালাল মুস্তাফা কামাল পাশা তুরস্কে অফিসিয়ালি খিলাফত বিলুপ্ত করে। সারা বিশ্বের মুসলিমদের সাথে মক্কার হুসাইন বিন আলীও মহানবী (সা.) আমল থেকে ১৩০০ বছর পর্যন্ত চলমান মুসলিমদের রাষ্ট্র খিলাফতের পতনে ব্যথিত হন। পৃথিবী থেকে খিলাফত মুছে গেছে, এটা হুসাইনের চেতনায় আঘাত করে। ব্রিটিশদের ক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা সত্ত্বেও ৫ মার্চ হুসাইন নিজেকে মুসলিমদের খলিফা ঘোষণা করেন।
ব্যস, এ-সুযোগটিই কাজে লাগায় খিলাফতের দীর্ঘদিনের শত্রু আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ। ব্রিটিশরা স্বাভাবিকভাবেই হুসাইনের নিজেকে খলিফা ঘোষণা করা মেনে নেয়নি এবং হেজাজের শাসক হিসেবে হুসাইনের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়।

আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ কালবিলম্ব না করে হেজাজ আক্রমণ করে এবং ১৯২৫ সালের শেষ নাগাদ পুরো হেজাজ দখলে নিয়ে নেয়। ১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ মক্কা-মদিনা-জেদ্দার গোত্রীয় নেতাদের সমর্থনে নিজেকে হেজাজের “সুলতান” ঘোষণা করে। ১৯২৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ইবনে সৌদ আগের নজদ ও বর্তমান হেজাজ মিলিয়ে Kingdom of Nejd and Hejaz ঘোষণা করে। ৪ মাস পর সেই বছরের ২৭ মে জেদ্দা চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশরা Kingdom of Nejd and Hejaz-কে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

নতুন জেদ্দা চুক্তি, ১৯২৭-এর মাধ্যমে ব্রিটিশ-সৌদের “Protectorate” স্ট্যাটাসের দারিন চুক্তি, ১৯১৫-এর সমাপ্তি ঘটে।
পরবর্তী ৫ বছর আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ তার দুই রাজত্বকে আলাদা রেখেই শাসন করে। অবশেষে ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইবনে সৌদ তার দুই রাজত্বকে একত্রিত করে তার নিজের ও বংশের পদবি অনুসারে দেশের নাম “Kingdom of Saudi Arabia” (আরবি: المملكة العربية السعودية‎ al-Mamlakah al-‘Arabiyyah as-Su‘ūdiyyah) ঘোষণা করে।
এভাবেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উসমানিয়া খিলাফতবিরোধী নীতির প্রকাশ্য সমর্থক হিসেবে, পদে পদে ব্রিটিশদের মদদ নিয়ে, দালাল আল-সৌদ পরিবার ১৯৩২ সাল থেকে Kingdom of Saudi Arabia নামে মুসলিমদের পবিত্র ভূমি দখলে রেখে শাসন করে যাচ্ছে।
                              ……………….      …………………          …………………
১. মিশরের মুরসি সরকারের পতনের পর সৌদি সরকারের ভূমিকায় মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই দালাল রাজপরিবারের ইতিহাস তাই মুসলিম উম্মাহর জেনে রাখা প্রয়োজন। বিশেষত বাংলাদেশে যেসব গণতন্ত্রবাদী কথিত ইসলামপন্থী বাস্তবে সৌদি রাজপরিবারের গুণমুগ্ধ ও মার্কিন দূতাবাসে নিয়মিত হাজিরাদানকারী হয়েও মুরসি ও মুসলিম উম্মাহর ভক্ত সেজে ব্লগে-ফেসবুকে মায়াকান্না করেন, তাদের এই দালাল রাজপরিবারের গোড়ার কাহিনি জানা বেশি প্রয়োজন।
 ২. সৌদি রাজপরিবারের সমালোচনাকে ওয়াহাবী মতবাদের সমালোচনা হিসেবে ভেবে যারা ক্ষুব্ধ হন, তারা লক্ষ করুন – এই নোটে কোথাও ওয়াহাবী মতবাদের প্রশংসা/সমালোচনা করা হয়নি – এটা এখানে প্রাসঙ্গিকও নয়। এখানে স্রেফ বলা হয়েছে – সৌদ পরিবার মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক উসমানিয়া খিলাফত ভাঙতে ওয়াহাবী মতবাদকে ব্যবহার করেছিল। আর সৌদ পরিবার জেনে-বুঝে দালালি করেছে তত্কালীন বিশ্বমোড়ল ও খিলাফতের শত্রু ব্রিটেনের।
 ৩. মাজারকেন্দ্রিক শিরকের চর্চা আর কবর জিয়ারত এক কথা নয়। মাজারকেন্দ্রিক শিরক পরিত্যাজ্য, কিন্তু কবর জিয়ারত একটি প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ।
 ৪. এই নোটে বহু বই থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে – তবে তথ্যগুলো এতই ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে, কম-বেশি সব তথ্যই Wikipedia-য় আছে। এমন কি, সৌদি দূতাবাসের ওয়েব সাইটেও আছে [অবশ্যই ব্রিটিশদের দালালির বিষয়টি বাদ দিয়ে]: http://www.saudiembassy.net/about/country-information/history.aspx
৫. যারা সৌদি আরবের ইতিহাস সামগ্রিকভাবে একটি বই থেকেই জানতে চান, তারা Cambridge University Press থেকে ২০০২ সালে প্রকাশিত Madawi al-Rasheed-এর লেখা A History of Saudi Arabia বইটি পড়তে পারেন। আমি এই বই থেকে সাহায্য নিয়েছি।
৬. প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ মুহাম্মদ সিন্দি রচিত ২২ পৃষ্ঠার নিবন্ধ/বুকলেট “The Direct Instruments of Western Control over the Arabs: The Shining Example of the House of Saud” এ-বিষয়ে একটি অনবদ্য রচনা। সময়ের অভাবে আমি এটা অনুবাদ করতে পারছি না। কেউ যদি অনুবাদ করে দেন, আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।]
আরো পড়ুন:

১. সৌদিদের ভণ্ডামি: https://www.facebook.com/meghnawa/posts/218599681623127
২. Madawi al-Rasheed-এর লেখা A History of Saudi Arabia:
৩. প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ মুহাম্মদ সিন্দি রচিত “The Direct Instruments of Western Control over the Arabs: The Shining Example of the House of Saud”:
পোস্টটি লিখেছেন: ব্লগার আসিফ রহমান

বুধবার, ২০ মে, ২০১৫

সহীহ হাদীসগুলোকে জাল হাদীস-দুর্বল হাদীস করার পিছনের কাহিনী

ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীসদের সহীহ হাদীসগুলোকে জাল হাদীস-দুর্বল হাদীস করার পিছনের কাহিনী


মুসলমনাদের অবস্থা এখন বড়ই খারাপ। কোথাও তারা নিরাপদ নয়। না দেশে, না বিদেশে। ইসলাম ধর্মকে সন্ত্রাসী ধর্ম, অসাম্প্রদায়িক ধর্ম আখ্যা দেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে উপর্যুপরিভাবে। ঠিক এমনি সময় মুসলমানরা আজ শতধা বিভক্ত। মুসলমনদের মাঝে ধর্মীয় কোন্দলের সয়লাব। অথচ এখন সবচে’ প্রয়োজন হল মুসলমানদের মাঝে একতা সৃষ্টি করা। ঐক্যমত্ব প্রতিষ্ঠিত করা। নবীজী সাঃ এর কালিমায়ে তায়্যিবার প্লাটফর্মে এক হওয়া আজ সময়ের আবশ্যকীয় দাবি।

যখন মুসলমানদের দুশমনরা মুসলমানদের উপর হামলা করে, তখন তারা এটা দেখেনা যে, সে কি দেওবন্দী না বেরেলবী? সে কি মুকাল্লিদ না গায়রে মুকাল্লিদ? সে কি কিয়াম করে না করেনা? সে কি মাজারে যায় কি যায় না? সে ইমামের পিছনে কিরাত পড়ে না পড়েনা?
“লোকটি মুসলমান” কেবল এই অপরাধেই হত্যা করা হয়।
কিন্তু এখন আমরা এই দুঃখজনক বাস্তবতার সম্মুখীন যে, ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীস নামের দলটি বারবার সহীহ হাদীস-জাল হাদীস-দুর্বল হাদীসের কথা বলে সহজ-সরলমনা মুসলিমদের ধোঁকা দিচ্ছে। নবীজী সাঃ এর বিশাল হাদিস ভান্ডারকে অস্বিকার করার জন্য কেবল বুখারী মুসলিম আর ক্ষেত্র বিশেষে কেবল সিহাহ সিত্তার হাদিস মানা। এই দাবির মাধ্যমে মুয়াত্তা মালিকের মত স্বীকৃত অসংখ্য সহীহ হাদিসের কিতাবের সহীহ হাদিসকে অস্বিকার করার এক ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে এই দলটি। এমনকি তারা নিজেদের মতবাদসমূহকে সত্য বলে প্রমাণ করার জন্য তাদের নিজস্ব প্রকাশনী থেকে সহীহ হাদীসগুলোকে জাল হিসেবে তৈরী করে চলেছে বেশ কয়েক দশক ধরে। তাদের প্রকাশনী পৃথিবী ব্যপি ছড়িয়ে আছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এই কাজ করার জন্য তাদের সৌদি আরব সরকার ইন্ধন যোগাচ্ছে। আর সৌদি আরবকে এই কাজের জন্য অর্থ দিছে আমেরিকা যা হিলারী ক্লিন্টনের স্বীকারোক্তি থেকেই প্রমানীত।
প্রথমে আগেরকার যুগের নামকরা মুহাদ্দিদ্গণের(হাদীস শাস্ত্রে পারদর্শী যিনি) হাদীস যাচাই বাছাইয়ের কিছু নীতি বিষয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলব। তার আগে কিছু শব্দের অর্থ সম্পর্কে যানা প্রয়োজন যেগুলো অনেকেই জানেন না।
রাবী=যিনি হাদীস বর্ণনা করেন।
হাদীসের চেইন= একটি হাদীস পাওয়া গেল এভাবে হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) থেকে ক, ক থেকে খ, খ থেকে গ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। এখানে ক, খ এবং গ হলেন একজন রাবী। আর “হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) থেকে ক, ক থেকে খ, খ থেকে গ” এটা হল হাদীসের চেইন।
এখন একটি হাদীস বিভিন্ন চেইনে পাওয়া যায়। সেই চেইনের ভিতর থাকেন অসংখ্য রাবী। খোদ বুখারী-মুসলিম শারীফেই দেখা যায় অনেক বার একই হাদীস একাধিক বার এসেছে। এটা হয়েছে একই হাদীসের বিভিন্ন চেইনের কারণে। চেইনের মধ্যে রাবী থাকেন। সেই রাবী হতে পারেন সত্যবাদী অথবা মিথ্যাবাদী। ধরুন একটি হাদীস নিম্নোক্ত কয়েকটি চেইনে পাওয়া গেলঃ
প্রথম চেইনঃ ক-খ-গ-ঘ
দ্বিতীয় চেইনঃ চ-ছ-জ-ঝ
তৃতীয় চেইনঃ ট-ঠ-ড-ঢ
চতুর্থ চেইনঃ ত-থ-দ-ধ
ধরে নিন অক্ষরগুলো হল রাবী। উপরের প্রথম তিনটি চেইনে গ, ছ, ট নামে তিন জন মিথ্যা বাদী রাবী রয়েছেন। কিন্তু চতুর্থ চেইনের সব রাবীগুলোই সত্যবাদী। সুতরাং প্রথম তিনটি চেইনের কারণে হাদীসটি জাল হিসেবে সাব্যস্ত হবে। কিন্তু চতুর্থ চেইনে আসার পর যখন দেখা যাবে সেখানের সব গুলো রাবীই সত্যবাদী তখন সেই জাল হাদীস সহীহ হয়ে যাবে। কারণটা খুব সহজ চতুর্থ চেইনের সব রাবীই সত্যবাদী। যার ফলে অনেক জাল হাদীস অনেক সময় সহীহ হাদীস হয়ে গেছে। এটা হল হাদীস যাচাই-বাছাই এর একটি উপায় মাত্র। এছাড়া আরও অনেক উপায় আছে। আগেরকার যুগের নামকরা মুহাদ্দিসগণ এভাবে অনেক হাদীস যাচাই-বাছাই করে তাদের নিজস্ব সহীহ হাদীস কিতাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আহলে হাদীসেরা যখন কোনো একটি হাদীসকে জাল বলে তখন তারা কেবলমাত্র সেই চেইনটির কথা উল্লেখ করে যেই চেইনটিতে মিথ্যাবাদী রাবী রয়েছে। সেই চেইনটির কথা তারা গোপন রাখছে যেই চেইনটির সকল রাবীই সত্যবাদী এবং যেই কারণে ঐ হাদীসটি সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। এটা হয় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে করছে না হয় হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে তাদের বা তাদের তথাকথিত নামধারী আলেমদের নূন্যতম কোনো ধারণাই নেই। আবার তারা শুধু তাই বলছে যা তাদের নেতারা শিখাচ্ছে বা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে লিখা আছে। সেটা যাই হোক না কেন এভাবে একাধিক চেইনে প্রাপ্ত হাদীসগুলোর কেবলমাত্র একটা চেইনের কথা উল্লেখ করে যে সহজ-সরলমনা মুসলিমরা প্রতারিত হচ্ছে সেটা তারা আদৌ বুঝতে পারছেন বলে মনে হয় না।
বুখারি-মুসলিম যে সব সহীহ হাদীস নেই এবং এগুলোও ছাড়াও যে আরও অনেক সহীহ হাদীস গ্রন্থ আছে তা দলীল সহকারে এখানে আলোকপাত করা হয়েছেঃ
http://www.somewhereinblog.net/blog/Tarek000/29615892
এবার আসা যাক কিভাবে তাদের প্রকাশনী থেকে সহীহ হাদীসগুলোকে জাল বানাচ্ছে সেই প্রসঙ্গে। এই ঘটনাটি তারা ঘটিয়েছে পাকিস্তানে তাদের নিজস্ব প্রকাশনী থেকে। তারা সেখানে সুনান ইবন নাসাঈ গ্রন্থের একটা সহীহ হাদীসের এক জন সত্যবাদী ও বিশ্বাসযোগ্য রাবীর নাম শোয়েব পরিবর্তন করে একজন দুর্বল রাবী সাঈদের নাম বসিয়ে দিয়ে তা প্রকাশ করে। বিশ্বাস হচ্ছে না তো! স্ক্যান কপিসহ দেখুন এখানেঃ
http://www.islamieducation.com/wahabi-fabrication-in-sunan…/
এভাবে তারা সহীহ হাদীসগুলোকে জাল-দুর্বল বলে প্রচারণা চালাচ্ছে।
শুধু এটা নয়। ১৯৯৯ সালে সৌদি আরবে দারুস সালাম প্রকাশনী প্রকাশিত ইমাম নববী(রঃ) এর ‘রিয়াদুস সালিহীন’ ও তারা তাদের নেতা নাসিরুদ্দিন আলবানিকে দিয়ে tampering করে। অনেক আলেমও এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। দেখুনঃ
http://www.livingislam.org/trs_e.html
নিরপেক্ষে মন নিয়ে ভাবুন একবার এটা কত বড় রকমের জালিয়াতি এগুলো! এই সকল ঘটনাটা তারা ঘটাছে বেশ কয়েক বছর ধরে। তারা এরকমভাবে তাদের প্রকাশনী থেকে আরও কত যে সহীহ হাদীসকে জাল বানিয়েছে তা একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই ভাল বলতে পারবেন।
এছাড়াও অনেক সময়ই তারা বলে বেড়ায় ইমাম তিরমিযী(রঃ), ইমাম নাসাঈ(রঃ) হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন হাদীস জাল, সহীহ নয়, রাবী দুর্বল ইতাদি কথাবার্তা। আমি নিজেও তাদের অনেক ওয়েবসাইটে এবং বই এ দেখেছি। তারা এভাবেই হাদীসগুলোকে জাল জাল বলে চালিয়ে দিচ্ছে। শত শত বছর ধরে যেই হাদীস গুলোর উপর আমল করে আসছে বিশ্বের শত শত আলেম সমাজ, কোটি কোটি সাধারণ মুসলিম জনতা। আর আজ এই ১৪শ বছর পর ফিতনা-ফাসাদের যুগে ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীস নামের দলটি খুঁজে পেল হাদীসগুলো আসলে জাল ছিল। নাকি তাদের প্রকাশনী থেকেই জালিয়াতি করে এসব করা হচ্ছে আর তাদের ওয়েবসাইটে এবং বইগুলোতে তা প্রকাশ করা হচ্ছে? তার সঠিক উত্তর একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই সব থেকে ভাল বলতে পারবেন। এরপর নিশ্চয়ই আর কোনো সন্দেহ থাকে না যে এদের যারা নিয়ন্ত্রণ করছে মানে এদের উপরের স্তরে যারা রয়েছেন তারা যে আসলেই ইসলামের শত্রু। আরও দেখুন তারা কিভাবে ইসলামী বই সহ তাফসীর গ্রন্থসমূহ পরিবর্তন করে চলেছে
https://www.youtube.com/playlist?list=PLCDE309308978D9FD
এটাই মূলত ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীসদের সহীহ হাদীস-জাল হাদিস-দুর্বল হাদীসের কাহিনী। আর ভুলে যাবেন না যেন শিয়া ফিতনার সময় তারা জাল হাদীস তৈরী করেছিল। তাদের হাত থেকে রক্ষা করে নামকরা মুহাদ্দিসগণ হাদীস যাচাই-বাছাই করে একত্র করেছেন। আর আজ ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীসেরা এই শেষ যুগে এসে নিজেদের মতের বিরুদ্ধের সহীহ হাদীসগুলোকে জাল হাদীস-দুর্বল হাদীস বানাচ্ছেন নিজদের প্রকাশনী থেকে আর তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করছে। আল্লাহ তা’আলা এদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন। সুম্মা আমীন।
[NB: এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন "প্রমানিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরুপ উন্মাচন"। কিতাবটি সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন মোবাইলঃ ০১৮৪২৯৩৩৩৯৬]
.
.

মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০১৫

নারী পুরুষের নামায এক না ভিন্ন ?

নারী পুরুষের নামায এক না ভিন্ন ?

আপনি জানেন কি কথিত আহলে হাদীসরা উম্মাতে মুসলিমার মাঝে বিভেদ করে এবার হাদীসের মাঝেও বিভেদ করছে???
তথাকথিত আহলে হাদীসরা উম্মাতে মুসলিমার মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে এবার হাদীসের মাঝেও বিভেদ সৃষ্টি করতে উঠেপড়ে লেগেছে।এর অনেক প্রমাণই আছে।আমি শুধু বুখারী শরীফ থেকে একটি প্রমাণ পেশ করবো।হাদীস নং ৬০৩।এটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নাম্বার।হাদীসটির একটি অংশকে অন্য অংশ থেকে পৃথক করে ফেলছে।পৃথককৃত অংশটি হল صلواكمارايتموني اصليঅর্থ:তোমরা আমাকে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে।" তারা এটি দিয়ে দলীল দিয়ে বলে নারী-পুরুষের নামায এক ও অভিন্ন।কিন্তু এর পরের অংশ فاذا حضرت الصلاة فليؤذن لكم احدكم وليؤمكم اكبركم অর্থ:"আর যখন নামাযের সময় হবে তখন যেন তোমাদের একজন আযান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে যেন তোমাদের ইমামতি করে।"
পরবর্তী দু অংশেও আগের মতই নারী-পুরুষ পার্থক্য না করে হুকুম করা হয়েছে।অথচ তারা আগের অংশকে পরের অংশের মাঝে বিভেদ ও পার্থক্য সৃষ্টি করে বলে নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতি অভিন্ন।আর দ্বিতীয় অংশের ক্ষেত্রে বলে নারীরা আযান দিতে ও ইমামতি করতে পারবেনা।এটি কি হাদীসের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি নয়??


--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- হাদীস ১: قال الامام ابو داود في كتابه المراسيل له.وهو جزء من سننه.انبأ ابن وهب.انبأ حيوة بن شريح.عن سالم بن غيلان.عن يزيد بن ابي حبيب ان رسول الله صلى الله عليه وسلم مر على امرأتين تصليان.فقال اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الارض.فان المرأة ليست في ذلك كالرجل.(سكت عنه ابو داود فهو عنده صالح.وهو مرسل جيد.عضده ما في هذا الباب من موصول وآثار واجماع وصرح الشيخ ناصر الدين البانى في سلسلة الاحاديث الضعيفة انه لا علة فيه سوى الارسال)তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব রহঃ বলেন,একবার রাসূল সাঃ নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।তখন তাদের বললেন,যখন সিজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবেবে।কেননা মহিলারা এক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। (কিতাবুল মারাসীল,ইমাম আবু দাউদ ৫৫,হাদীস ৮০)। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস নওয়া সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ "আওনুল বারী" (১/৫২০)তে লিখেছেন, উল্লিখিত হাদীসটি সকল ইমামের উসূল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য। মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী 'সুবুলুস সালাম শরহু বুলুগিল মারাম' গ্রন্থে (১/৩৫১,৩৫২)এই হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সিজদার পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। চলবে ইনশাআল্লাহ.....


--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- হাদীস ৩: قال الطبراني:حدثنا محمد بن عبد الله الحضرمي.قال:حدثتني ميمونة بنت حجر بن عبد الجبار بن وائل بن حجر.عن ابيها عبد الجبار.عن علقمة عمها.عن وائل بن حجر.قال:جئت النبي صلى الله عليه وسلم فقال:فساق الحديث.وفيه:يا وائل بن حجر!اذا صليت فاجعل يديك حذاء اذنيك.والمرأة تجعل يدها حذاء ثدييها. (رواه الطبراني في الكبير .ج٢٢ص١٩-٢٠.قال الهيثمي في مجمع الزوائد ج٢ص٢٧٢:رواه الطبراني في حديث طويل في مناقب وائل من طريق ميمونة بنت حجر.عن عمتها ام يحيى بنت عبد الجبار.ولم اعرفها.وبقية رجاله ثقات. قال الراقم:وفي الاسناد تعريف كاشف عن هذه المرأة.وهي من اتباع التابعين ان لم تكن تابعية.والمستور من هذه الطبقة محتج به على الصحيح.لا سيما ولحديثها هذا شواهد من الاصول والآثار) হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রাঃ বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হলাম,তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও)বললেন,হে ওয়াইল ইবনে হুজর!যখন তুমি নামাজ শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে।আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আল মু'জামুল কাবীর,তাবারানী ২২/২৭২) এই হাদীসটিও হাসান। চলবে ইনশাআল্লাহ....

--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- আছারে সাহাবা ১: عن ابي اسحاق عن الحارث عن علي.قال:اذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها.(رواه عبد الرزاق في المصنف.واللفظ له.وابن ابي شيبة في المصنف ايضا.واسناده جيد.والصواب في الحارث هو التوثيق) হযরত আলী রাঃ বলেছেন,মহিলা যখন সিজদা করবে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সিজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। (আল মুসান্নাফ,আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৮,অনুচ্ছেদ:মহিলার তাকবীর,কিয়াম,রুকু ও সিজদা;আল মুসান্নাফ,ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৮;সুনানে কুবরা,বায়হাকী ২/২২২) আছারে সাহাবা:২ حدثنا ابو عبد الرحمن المقرئ.عن سعيد بن(ابي)ايوب.عن زيد بن (ابي)حبيب.عن بكير بن عبد الله بن الاشج.عن ابن عباس انه سئل عن صلاة المرأة.فقال:تجتمع وتختفز.(رواه ابن ابي شيبة.ورجاله ثقات) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে,মহিলারা কীভাবে নামায আদায় করবে?তিনি বললেন,খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে।(আল মুসান্নাফ,ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২) চলবে ইনশাআল্লাহ....


--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- আকওয়ালুত তাবিঈন:- ১:আতা ইবনে আবী রাবাহ রহঃ (ক)ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ বলেন:- قال هشيم:اخبرنا شيخ لنا قال:سمعت عطاء سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة؟قا:حذو ثدييها.(مصنف ابن ابي شيبة.١/٢٧٠) হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল,নামাজে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে?তিনি বললেন বুক বরাবর।(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,১/২৭০) (খ) ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ আরো বর্ণনা করেন- عن ابن جريج قال:قلت لعطاء:تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل؟قال:لا ترفع بذلك يديها كالرجل.واشار فخفض يديه جدا.جمعهما اليه جدا.وقال:ان المرأة هيئة ليست للرجل وان تركت ذلك فلا حرج.(المصنف ١/٢٧٠) ইবনে জুরাইজ রহঃ বলেন,আমি আতা ইবনে আবী রাবাহ রহঃ কে জিজ্ঞেস করলাম,মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে?তিনি বললেন,মহিলা পুরুষের মত হাত উঠাবে না।এরপর তিনি(মহিলাদের হাত তোলার ভঙ্গি দেখালেন এবং)তাঁর উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথে খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন,মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন।তবে এমন না করলেও কোন অসুবিধা নেই।(আলমুসান্নাফ,১/২৭০)। আকওয়ালুত তাবিঈন:- ২:মুজাহিদ ইবনে জাবর রহঃ ইবনে আবী শায়বা রহঃ বর্ণনা করেন- عن مجاهد بن جبر انه كان يكره ان يضع الرجل بطنه على فخذيه اذا سجد كما تضع المرأة.(المصنف.١/٣٠٢) হযরত মুজাহিদ ইবনে জাবর রহঃ পুরুষদের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নিফে ইবনে আবী শাইবা,পরিচ্ছেদ:মহিলা কীভাবে সেজদায় থাকবে?১/৩০২)। চলবে ইনশাআল্লাহ....   

--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- আকওয়ালুত তাবিঈন: ৩.ইবনে শিহাব যুহরী রহঃ ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন- عن الزهري قال:ترفع يديها حذو منكبيها(المصنف لابن ابي شيبة.١/٢٧٩) যুহরী রহঃ বলেন,মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে।(ইবনে আবী শায়বা,১/২৭০)। ৪.হযরত হাসান বসরী রহঃ ৫.কাতাদাহ ইবনে দিআমা রহঃ আব্দুর রাযযাক ও ইবনে আবী শাইবা বর্ণনা করেন- عن الحسن وقتادة قالا:اذا سجدت المرأة فانها تنضم مااستطاعت ولاتتجافي لكي لا ترفع عجيزتها.(عبد الرزاق.٣/١٣٧؛ابن ابي شيبة.١/٣٠٣) হযরত হাসান বসরী ও হযরত কাতাদাহ রহঃ বলেন,মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে।অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দেবে না;যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে।(মুসান্নিফে আব্দুর রাযযাক,৩/১৩৭;ইবনে আবী শাইবা,১/৩০৩)। ৬.হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ (ক)ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন- عن ابراهيم اذا سجدت المرأة فلتضم فخذيها ولتضع بطنها عليهما.(المصنف لابن ابي شيبة.١/٣٠٢) ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ বলেন,মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে।(ইবনে আবী শাইবা,১/৩০২)। (খ)আব্দুর রাযযাক রহঃ বর্ণনা করেন- عن ابراهيم النخعي قال:كانت تؤمر المرأة ان تضع ذراعهاوبطنها على فخذيها اذا سجدت.ولا تتجافى كما تتجافى الرجل.لكي لا ترفع عجيزتها.(المصنف لعبد الرزاق.٣/١٣٧) হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ আরো বলেন,মহিলাদেরকে হুকুম করা হত সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখতে,পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখতে;যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে।(আব্দুর রাযযাক,৩/১৩৭)। ৭.খালেদ ইবনে লাজলাজ রহঃ ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন- عن خالد بن اللجلاج قال:كن النساء يؤمرن ان يتربعن اذا جلسن في الصلاة.ولا يجلسن جلوس الرجال على اوراكهن يتقي ذلك على المرأة مخافة ان يكون منها الشيء.(المصنف لابن ابي شيبة.١/٣٠٣) হযরত খালেদ ইবনে লাজলাজ রহঃ বলেন,মহিলাদেরকে হুকুম করা হত যেন তারা নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের ওপর বসে।পুরুষদের মত যেন না বসে।আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়।(ইবনে আবী শাইবা,১/৩০৩)। চলবে ইনশাআল্লাহ...

--পুরুষ মহিলার নামাজের পার্থক্য-- ১.ফিকহে হানাফী: ১.১.ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অন্যতম প্রধান শিষ্য ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ বলেন- احب الينا ان تجمع رجليها في جانب ولا تنتصب انتصاب الرجل(كتاب الآثار للامام محمد رحمه الله.١/٦٠٩) আমাদের নিকট মহিলাদের নামাযে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হল উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে,পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা।(কিতাবুল আসার,১/৬০৯) ১.২.মুহাদ্দিস আবুল ওয়াফা আফগানী রহঃ কিতাবুল আসার এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন-يروى امامنا الاعظم عن نافع عن ابن عمر رضى الله عنهما انه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم.قال:كن يتربعن ثم امرن ان يحتفزن. اخرجه ابو محمد الحارثي والاشنانى وابن خسرو من طريقه عن سفيان الثوري عنه.(راجع جامع المسانيد ج١ص٤٠٠) وهذا اقوي واحسن ما روي في هذا الباب.ولذا احتج به امامنا وجعله مذهبه واخذ به. আমাদের ইমামে আযম আবু হানীফা রহঃ নাফে রহঃ থেকে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন,হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে মহিলারা কীভাবে নামায পড়তেন?তিনি বললেন,আগে তারা চারজানু হয়ে বসতেন,পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে।(জামিউল মাসানীদ,১/৪০০)। উক্ত হাদীসটি এ বিষয়ে সর্বাধিক শক্তিশালী।এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন,এ অনুযায়ী আমল করেছেন এবং এটিকে মাযহাব বানিয়ে নিয়েছেন।(কিতাবুল আসার [টীকা]১/৬০৭) ১.৩.ইমাম আবুল হাসান কারখী হানাফী রহঃ ও তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'আল মুখতাসার' এ মহিলাদের নামাজের পার্থক্য বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম আবুল হুসাইন আল কুদূরী আল হানাফী রহঃ তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থে(১০১-১০২ পান্ডুলিপি)আরো বিস্তারিতভাবে দলীলসহ লিখেছেন। (বিস্তারিত দেখুন:কিতাবুল আসারের টীকা,১/৬০৯)। ১.৪.আল্লামা আব্দুল হাই লাখনোভী হানাফী রহঃ বলেন- وهذا كله في حق الرجال.واما في حق النساء فاتفقو على ان السنة لهن وضع اليدين على الصدر.لانه استر لهن... وفي المضمرات ناقلا عن الطحاوي:المرأة تضع يديها على صدرها لان ذلك استر لها. মহিলাদের ব্যাপারে সকলে একমত যে,তাদের জন্য সুন্নাহ হল বুকের উপর হাত বাঁধা।কারণ এটাই তাদের জন্য যথোপযুক্ত সতর।(আস-সিআয়া:২/১৫৬) আরো দেখুন:(ক)হিদায়া ১/১০০,১১০,১১১(খ)বাদায়িউস সানায়ে,১/৪৬৬;(গ)আল মাবসূত,১/২৫;(ঘ)ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৫০৪;(ঙ)ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১/৭৩,৭৫। চলবে ইনশাআল্লাহ... 

বাউলদের সম্পর্কে লোমহর্ষক তথ্য

সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে?


ক্যাটেগরিঃ শিল্প-সংস্কৃতি
  2
বাউল প্রসঙ্গে নতুন করে সামনে চলে এসেছে। পাংশা উপজেলার আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষক কিছু বাউলকে তওবা পড়ান এবং তাদের লম্বা গোঁফ ও চুল কেটে দেন।
একটি জাতীয় দৈনিকে একজন কলাম লেখক ইতিহাস থেকে বাউলদের তওবা পড়ার কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছেন যা ঘটেছিল ১৯৩২ সালে, ১৯৪২ এবং ১৯৮৪ সালে। প্রায় একশত বছরের এ রকম কয়েকটি ঘটনাকে ব্যাতিক্রম হিসাবে গন্য করা যায়, তবে এ কথা বিবেচনা যোগ্য যে বাবুলরা যেহেতু মুসলিম নামধারী সেহেতু তাদেরকে মুসলিম সমাজ কিছুটা নিয়ন্ত্রন করবেই, সামাজিক নিয়ন্ত্রন বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না, সমাজ অস্বাভাবিক কাজ গ্রহণ করেনা।
লেখক বাউলদের অনেক প্রশংসা করেছেন, তার ভাষ্য মতে “তাদের দ্বারা বাংলাদেশে এক মানবতাবাদী এক জাগরণ ঘটে” “তাদের হাত ধরেই কৃষক সমাজের মধ্যে ঘটেছিল দেশজ রেঁনেসা” “বাউলরাই হচ্ছে আমাদের আদর্শ নারী পূরুষ”। এ সবই হচ্ছে অতিরঞ্জিত কথা। লালন নিজে সংগীতের ক্ষেত্রে অনেক অনেক বড়। কিন্তু সাধারণ বাউররা তা নয়। তারা অস্বাভাবিক জীবন যাপন করে, তারা অপরিচ্ছসন্ন তাকে, অবাধ যৌনাচারে বিশ্বাস করে, তাদের পূরুষরা হায়েজের রক্তপান বৈধ মনে করে। তাদের নারীরা পূরুষের বীর্যপান বৈধ মনে করে। এসব আমি জেনেছি লালন গবেষক লালনের উপর পিএইচডি করেছেন এক ক্লাসমেটের কাছ থেকে।
বাউলরা কখনই কোন আদর্শ নয়, তারা সাধারণ মানুষ, তারা সভ্যতার কিছুই জানে না। তারা সত্যিকার অর্থে কোন ধার্মিক লোকও না। কিন্তু একথা অবশ্যই বলতে হবে যে, এসব নিরীহ লোকদের উপর কোনো অত্যাচার বৈধ হতে পারেনা, যা করতে হবে মুসলিম সমাজকে তা বৈধ ভাবে করতে হবে।
আমার বাড়ির পাশে এক বাউল ছিল। সে তার নিজের প্রসাব পান করত। আর ওনার পাশ দিয়ে দুর্গন্ধের কারনে হেটে যাওয়া যেত না।
চরম বিকৃত, অজ্ঞ, নেশাগ্রস্ত, অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা মনের অধিকারী তথা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আদর্শশূন্য সুশীলদের আদর্শ এসব তথাকথিত বাউলদের জ্ঞানের আলো দ্বারা অন্ধকার পথ থেকে উদ্ধার করতে হবে।
আরও অবাক করা ব্যাপার হলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আদর্শ শূন্য বাউলপ্রেমী হাসিনা সরকারের বিটিভিতে ইসলামী অনুষ্ঠানের থিম সং মূল হলো অনেকটা এরকম–
বাউলদের বাংলাদেশ
মাইজভান্ডারির বাংলাদেশ
সুফি-সাধকের বাংলাদেশ
মাঝারের বাংলাদেশ……
বাউলরা যে জীবনাচারে অভ্যস্ত তা যদি আদর্শ হয় তাহলে মানুষকে আর কোন কিছু করতে হবেনা। শুধু গাঁজা খাও, নেশা করো, নষ্টামি করো এসবই হবে জীবন। যারা বাউল জীবনের পক্ষে বলে তারা তাদের ছেলে-মেয়েকে সেই বাউলের আস্তানায় পাঠাক। তারপর বাউল জীবনকে আদর্শ মানে কিনা বুঝা যাবে…
বাউলদের যারা উচ্ছিষ্ট গোঁফ দাড়ি কেটে দিয়েছেন সে সকল স্থানীয়দের সাক্ষাৎকার আমরা টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখেছি। তাদের কথায়ও বোঝা গিয়েছে; এটা একটি স্বাভাবিক সামাজিক প্রতিরোধ। এখানে কোন মতাদর্শ বা রাজনৈতিক চিন্তা কাজ করেনি। স্থানীয় সমাজের মাতুব্বর, বয়জেষ্ঠগণ, মসজিদের ইমাম, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি সবাই একত্রিত হয়ে বিনা প্ররোচনায় এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। পরবর্তীতে আমাদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক মনোভাব এই ঘটনা থেকে যে যার মত ফায়দা লুটতে উঠে পড়ে লেগেছে।
আমরা সম্প্রতি আওয়ামী নেতাকমী কর্তৃক বাউলদের চুলদাড়ি কেটে নেয়ার ঘটনা শুনেছি। অনেকে বিষয়টি নিয়ে বাঙালি সংস্কৃতি গেল গেল বলে রব তুলেছেন। কিন্তু আমরা কি জানি বাউলতত্ত্ব কী? বা এতে কী বলা রয়েছে? আমরা কিন্তু জানি না। আনুশেহ, সুমীর মতো কিছু অধুনা গায়িকা বাউলতত্ত্বের প্রচারপ্রসারে উঠেপড়ে লেগেছে। প্রসেনজিৎ এসে কয়েকদিন আগে লালন নিয়ে সিনেমা করে গেল। মূলত ইন্ডিয়াপন্থী কিছু বুদ্ধিজীবীর লালনপ্রেম যে উথলে উঠেছে তা আমাদের ভাবনার বিষয়। তারচেয়ে বড় কথা আমরা জানি না লালন আসলে কে? তার ধর্ম আসলে কি? এই প্রশ্নের জবাব দিবে নিন্মোক্ত লেখাটি
লালন ছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের গুরু। আমরা কি জানি কারা এই বাউল সম্প্রদায়? কি তাদের ধর্মবিশ্বাস ও জীবনাচরণ? নব্বই ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সাথে লালন ফকির বা বাউল সম্প্রদায়ের আচার-আচরণ, বিশ্বাস ও মূ্ল্যবোধ আসলে কতটুকু সম্পর্কিত? সর্বোপরি যারা বাউল সংস্কৃতিকে বাঙ্গালীর সংস্কৃতি বলে ১২ কোটি মুসলিমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে তাদের এসব কর্মকান্ডের উদ্দেশ্যই বা কি?
বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে যারা পড়াশোনা করেছেন তাদের কাছে প্রয়াত লেখক আহমদ শরীফের “বাউল তত্ত্ব” এবং লালন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডক্টর আনোয়ারুল করিমের “বাংলাদেশের বাউল- সমাজ, সাহিত্য ও সংগীত” নামের বই দুটো খুবই পরিচিত। বাউল শব্দটির উৎস ও এই সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে ডক্টর আনোয়ারুল করিম তার বাংলাদেশের বাউল বইতে যা লিখেছেন তার সারাংশ হল, প্রাচীন প্যালেস্টাইন এর রাসসামরায় বা’আল নামের একজন প্রজনন দেবতার উপাসনা করা হতো। তৌরাত, ইঞ্জিল(বাইবেল), কোরান মজিদসহ সকল ধর্মগ্রন্থেই এই দেবতাকে তীব্র নিন্দা করা হয়েছে এবং তার উপাসনা থেকে সকলকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত বা’আল প্রজনন-দেবতা হওয়ায় মৈথুন বা যৌনাচার এই ধর্মের অঙ্গীভূত হয়ে পড়ে। এই বা’আল ধর্ম এক্সময় এ উপমদেশীয় অঞ্চলেও ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে এ অঞ্চলে ইসলামের সুফীবাদী মতবাদের প্রচার-প্রসার ঘটার পর সম্ভবত ইসলাম ও পৌত্তলিকতা উভয় মতবাদের সংমিশ্রণে একটি নতুন লোকধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল যার উপরিভাগে ছিল মুসলিম সূফীবাদের প্রাধান্য, অভ্যন্তরে ছিল তন্ত্র ও যোগনির্ভর দেহজ সাধনা। তাই তার ধারণা মতে কালক্রমে এই বা’আল লোকধর্মই পরবর্তীতে বাউল লোকধর্মে পরিণত হয়েছে এবং লোকনিরুক্তি অনুসারে বাউল শব্দটি বা’আল>বাওল>বাউল এভাবে পরিবর্তিত হয়ে এসেছে। (বা.বা পৃষ্ঠা ১৩৩-১৪৫) ডা. আহমদ শরীফ তার “বাউলতত্ত্ব” বইটিতে বাউল ধর্মমত সম্পর্কে বলেন, “ব্রাহ্মণ্য, শৈব ও বৌদ্ধ সহজিয়া মতের সমবায়ে গড়ে উথেছে একটি মিশ্রমত যার নাম নাথপন্থ। …দেহতাত্ত্বিক সাধনাই এদের লক্ষ্য। (নাথপ্নথ এবং সহজিয়া) এ দুটো সম্প্রদায়ের লোক একসময় ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়, কিন্তু পুরনো বিশ্বাস-সংস্কার বর্জন করা সম্ভব হয়নি বলেই ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মের আওতায় থেকেও এরা পুরনো প্রথায় ধর্ম সাধনা করে চলে, তার ফলেই হিন্দু-মুসলমানের মিলিত বাউল মতের উদ্ভব। তাই হিন্দু গুরুর মুসলিম সাগরেদ বা মুসলিম গুরুর হিন্দু সাগরেদ গ্রহণে কোন বাধা নেই। তারা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও শরিয়তী ইসলামের বেড়া ভেঙে নিজের মনের মত করে পথ তৈরি করে নিয়েছে। এজন্য তারা বলে,
“কালী কৃষ্ণ গড খোদা/কোন নামে নাহি বাধা
মন কালী কৃষ্ণ গড খোদা বলো রে।” (বাউলতত্ত্ব পৃঃ ৫৩-৫৪)।
সাধারণ জনারণ্যে বাউলরা নাড়ার ফকির নামে পরিচিত। ‘নাড়া’ শব্দটির অর্থ হল শাখাহীন অর্থাৎ এদের কোন সন্তান হয়না। তারা নিজেদের হিন্দু মুসলমান কোনকিছু বলেই পরিচয় দেয়না। লালন শাহ ছিলেন বাউলদের গুরু। লালনকে বাউলরা দেবতা জ্ঞানে পূজা করে। তাই তার ‘ওরসে’ তাদের আগমন এবং ভক্তি অর্পণ বাউলদের ধর্মের অঙ্গ। (বা.বা পৃঃ ১৪) লালন শাহের অনুসারীদের একটি অংশ ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একজন মুসলমান অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “আমরা বাউল। আমাদের ধর্ম আলাদা। আমরা না-মুসলমান, না-হিন্দু। আমাদের নবী সাঁইজি লালন শাহ। তাঁর গান আমাদের ধর্মীয় শ্লোক। সাঁইজির মাজার আমাদের তীর্থভূমি।।…আমাদের গুরুই আমাদের রাসুল। …ডক্টর সাহেব [অর্থাৎ উক্ত মুসলিম অধ্যাপক] আমাদের তীর্থভূমিতে ঢুকে আমাদের ধর্মীয় কাজে বাধা দেন। কোরান তেলাওয়াত করেন, ইসলামের কথা বলেন… এ সবই আমাদের তীর্থভূমিতে আপত্তিকর। আমরা আলাদা একটি জাতি, আমাদের কালেমাও আলাদা –লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু লালন রাসুলুল্লাহ।“ (দ্রঃ সুধীর চক্রবর্তী, ব্রাত্য লোকায়ত লালন, ২য় সংস্করণ, আগস্ট ১৯৯৮ পৃঃ ৪-৯৫)
বাউল সাধনায় গুরুশ্রেষ্ঠকে ‘সাঁই’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সাধনসঙ্গিনীকেও গুরু নামে অভিহিত করা হয়। মূলত সাধনসঙ্গিনীর সক্রিয় সাহায্য ব্যতীত সাধনায় সিদ্ধী লাভ করা যায় না। তাই তাকে ‘চেতন গুরু’ বলা হয়। বাউলরা বিশ্বাস করে গুরুর কোন মৃত্যু নেই। তিনি কেবল দেহরক্ষা করতে পারেন। তিনি চিরঞ্জীবী। বাউলরা মন্দিরে কিংবা মসজিদে যায়না। জুম্মার নামায, ঈদ এবং রোযাও পালন করেনা। তারা তাদের সঙ্গিনীকে জায়নামাজ নামে অভিহিত করে। বাউলরা মৃতদেহকে পোড়ায়না। এদের জানাজাও হয়না। হিন্দু মুসলমান নামের সব বাউলদের মধ্যেই এই রীতি। এরা সামাজিক বিবাহ বন্ধনকেও অস্বীকার করে। নারী-পুরুষের একত্রে অবাধ মেলামেশা এবং বসবাসকে দর্শন হিসেবে অনুসরণ করে। (বা.বা পৃঃ ১৫-১৭)
বাউল সাধনা মূলত একটি আধ্যাত্বসাধনা, তবে যৌনাচার এই সাধনার অপরিহার্য অঙ্গ। ড. আহমদ শরীফের ভাষায় কামাচার বা মিথুনাত্বক যোগসাধনাই বাউল পদ্ধতি। বাউল সাধনায় পরকীয়া প্রেম এবং গাঁজা সেবন প্রচলিত। বাউলরা বিশ্বাস করে যে, কুমারী মেয়ের রজঃপান করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধক তৈরী হয়। তাই বাউলদের মধ্যে রজঃপান একটি সাধারন ঘটনা। এছাড়া, তারা রোগমুক্তির জন্য স্বীয় মুত্র ও স্তনদুগ্ধ পান করে। সর্বরোগ থেকে মুক্তির জন্য তারা মল, মুত্র, রজঃ ও বীর্য মিশ্রণে প্রেমভাজা নামক একপ্রকার পদার্থ তৈরি করে তা ভক্ষণ করে। একজন বাউলের একাধিক সেবাদাসী থাকে। এদের অধিকাংশই কমবয়সী মেয়ে। (বা.বা পৃ ৩৫০, ৩৮২)
এদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকায়, অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিমও ধর্মবিবর্জিত বিকৃত যৌনাচারী মুসলিম নামধারী বাউলদেরকে সূফী-সাধকের মর্যাদায় বসিয়েছে। মূলতঃ বিকৃত যৌনাচারে অভ্যস্ত ভেকধারী এসব বাউলরা তাদের বিকৃত ও কুৎসিত জীবনাচারণকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখার জন্য বিভিন্ন গানে মোকাম, মঞ্জিল, আল্লাহ, রাসূল, আনল হক, আদম-হাওয়া, মুহাম্মদ-খাদিজাসহ বিভিন্ন আরবী পরিভাষা, আরবী হরফ ও বাংলা শব্দ প্রতীকরূপে ইচ্ছাকৃতভাবেই ব্যবহার করেছে। এদেশে বহুল প্রচলিত একটি লালন সঙ্গীত হলো,
“বাড়ির পাশে আরশি নগর/সেথা এক পড়শী বসত করে,
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”
এই গানটিকে আমাদের সমাজে খুবই উচ্চমার্গের আধ্যাতিক গান মনে করা হলেও, এটি মূলত একটি নিছক যৌনাচারমূলক গান, যাতে আরশিনগর, পড়শী শব্দগুলো প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তাদের বিকৃত জীবনাচারকে গোপন রাখার উদ্দেশ্যে। (বা.বা পৃঃ ৩৬৮-৩৬৯)
বাউল সাধকরা বস্তুতঃ নিরাকার আল্লাহকে সাকারত্ব প্রদান করে তাদের অনুসারীদের পৌত্তলিকতার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এরা সাধারন মানুষের সারল্য, অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কারণে তাদের বিভ্রান্ত করেছে এবং এইসব বিকৃত সাধনাসম্বলিত লোকধর্ম আসলে আমাদের সমাজ জীবনকে ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সমাজ জীবনে বাউল লোকধর্মের এই ভয়ঙ্কর প্রভাব লক্ষ্য করে বাংলা ১৩৩৩ সালে হাজী মৌলভী রেয়াজউদ্দীন আহমদ “বাউল ধ্বংশ ফতওয়া” নামে বাউলবিরধী একটি বই লেখেন। যেখানে তিনি এই বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইসলাম, ইসলামী আকিদাহ্ যা এদেশের আপামর মুসলিমের অন্তর্নিহিত বিশ্বাসের সাথে বাউল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাসের দূরতম সম্পর্ক নেই এবং তা পুরোপুরি ষাংঘর্ষিক। শুধু তাই নয়, বিশ্বাসে পৌত্তলিক, আচার-আচরণে ভয়ঙ্কর কুসংস্কারাচ্ছন্ন, বিকৃত জীবানাচারণ ও অবাধ যৌনাচারে অভ্যস্ত বাউল সম্প্রদায় কোনভাবেই এদেশের মানুষের কৃষ্টি-কালচার বা আত্বপরিচিতির বন্ধনমূল হতে পারেনা। কবীর চৌধুরী, হামিদা হোসেন, আয়েশা খানম এবং তাদের অনুসারীরা বস্তুতঃ প্রগতিশীলতা, আধুনিকতা ও দেশীয় কৃষ্টি-কালচারের নামে, ফুল-পাখি-গান-কবিতা-সৌন্দর্য ইত্যাদির উছিলায় এদেশের মানুষকে অশ্লীল, বিকৃত ও নৈতিক মূল্যবোধ বিবর্জিত এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারাচ্ছন্ন জগতের দিকে নিয়ে যেতে চায়। যে নিকষ কালো আঁধারের মূলে রয়েছে বস্তুবাদ, ভোগবাদ ও চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতা এবং শেষপ্রান্তে অপেক্ষা করছে নিশ্চিত ধ্বংস। স্বনামধন্য লেখক হুমাইয়ূন আহমেদ, সাঁইজির মূর্তি ভাঙায় যার অন্তরে হাহাকার উঠেছে, তার বিতর্কিত ব্যক্তিজীবনই আমাদের বলে দেয় এই হাহাকারের উৎস কোথায়। এছাড়া, রোবায়েত ফেরদৌসের মত ব্যক্তি, যারা কিনা এদেশের তরুন-তরুনীদের বিয়ের আগেই শারীরিক সম্পর্ক তৈরীর ফ্রি লাইসেন্স দিতে চায় তাদের তো বল্গাহীন উদ্দাম বাউলিয়া জীবনাচারণই কাম্য।
তবে, একই সাথে এটাও ঠিক যে, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা পরধর্ম মতে সহনশীল। যদিও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের তাঁবেদার বুদ্ধিজীবী সুশীল সমাজের একটি অংশ মাঝে মাঝেই এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কল্পিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভি্যোগ এনে থাকেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো, ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল ভারতের মতো এদেশের মানুষ কখনোই সংখ্যালঘুদের উপর বর্বরভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে না, অন্য ধর্ম বা মতে বিশ্বাসী মানুষদের জীনন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে না, কিংবা তাদের ঘরবাড়ী, উপাসনালয়ও জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়না। তাই, যদি হামিদা হোসেন এবং কবীর চৌধুরীর অনুসারীরা বাউল ধর্মকে তাদের নিজস্ব ধর্ম বা সংস্কৃতি বলে মানতে চায় কিংবা শ্রীকৃষ্ণের অবতারে বিশ্বাসী লালন ফকিরকে তাদের দেবতা বলে ঘোষণা তবে, তবে নিঃসন্দেহে তাদের কেউ বাধা দেবে না। তারা যদি নিজেদের অর্থ-সম্পদ খরচ করে তাদের অধিকৃত জায়গায় আকাসছোঁইয়া লালনমূর্তি বানাতে চায়, তাতেও হয়তো কেউ কোন আপত্তি করবে না। কিন্তু জাতীয় বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, হাজী ক্যাম্পের সামনে জনগণের অর্থ ব্যয় করে লালনমূর্তি তৈরী বা বিমানবন্দরের সামনের চত্বরকে ‘লালন চত্বর’ ঘোষণার দাবী একেবারেই অযৌক্তিক। কারণ, তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন বিশ্বাস বা বিকৃত মূল্যবোধকে জাতীয় কৃষ্টি-কালচার হিসেবে সমস্ত জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কোন অধিকার তাদের নেই।
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে?
- See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf

ক্যাটেগরিঃ শিল্প-সংস্কৃতি
 
বাউল প্রসঙ্গে নতুন করে সামনে চলে এসেছে। পাংশা উপজেলার আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষক কিছু বাউলকে তওবা পড়ান এবং তাদের লম্বা গোঁফ ও চুল কেটে দেন।
একটি জাতীয় দৈনিকে একজন কলাম লেখক ইতিহাস থেকে বাউলদের তওবা পড়ার কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছেন যা ঘটেছিল ১৯৩২ সালে, ১৯৪২ এবং ১৯৮৪ সালে। প্রায় একশত বছরের এ রকম কয়েকটি ঘটনাকে ব্যাতিক্রম হিসাবে গন্য করা যায়, তবে এ কথা বিবেচনা যোগ্য যে বাবুলরা যেহেতু মুসলিম নামধারী সেহেতু তাদেরকে মুসলিম সমাজ কিছুটা নিয়ন্ত্রন করবেই, সামাজিক নিয়ন্ত্রন বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না, সমাজ অস্বাভাবিক কাজ গ্রহণ করেনা।
লেখক বাউলদের অনেক প্রশংসা করেছেন, তার ভাষ্য মতে “তাদের দ্বারা বাংলাদেশে এক মানবতাবাদী এক জাগরণ ঘটে” “তাদের হাত ধরেই কৃষক সমাজের মধ্যে ঘটেছিল দেশজ রেঁনেসা” “বাউলরাই হচ্ছে আমাদের আদর্শ নারী পূরুষ”। এ সবই হচ্ছে অতিরঞ্জিত কথা। লালন নিজে সংগীতের ক্ষেত্রে অনেক অনেক বড়। কিন্তু সাধারণ বাউররা তা নয়। তারা অস্বাভাবিক জীবন যাপন করে, তারা অপরিচ্ছসন্ন তাকে, অবাধ যৌনাচারে বিশ্বাস করে, তাদের পূরুষরা হায়েজের রক্তপান বৈধ মনে করে। তাদের নারীরা পূরুষের বীর্যপান বৈধ মনে করে। এসব আমি জেনেছি লালন গবেষক লালনের উপর পিএইচডি করেছেন এক ক্লাসমেটের কাছ থেকে।
বাউলরা কখনই কোন আদর্শ নয়, তারা সাধারণ মানুষ, তারা সভ্যতার কিছুই জানে না। তারা সত্যিকার অর্থে কোন ধার্মিক লোকও না। কিন্তু একথা অবশ্যই বলতে হবে যে, এসব নিরীহ লোকদের উপর কোনো অত্যাচার বৈধ হতে পারেনা, যা করতে হবে মুসলিম সমাজকে তা বৈধ ভাবে করতে হবে।
আমার বাড়ির পাশে এক বাউল ছিল। সে তার নিজের প্রসাব পান করত। আর ওনার পাশ দিয়ে দুর্গন্ধের কারনে হেটে যাওয়া যেত না।


চরম বিকৃত, অজ্ঞ, নেশাগ্রস্ত, অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা মনের অধিকারী তথা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আদর্শশূন্য সুশীলদের আদর্শ এসব তথাকথিত বাউলদের জ্ঞানের আলো দ্বারা অন্ধকার পথ থেকে উদ্ধার করতে হবে।
আরও অবাক করা ব্যাপার হলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আদর্শ শূন্য বাউলপ্রেমী হাসিনা সরকারের বিটিভিতে ইসলামী অনুষ্ঠানের থিম সং মূল হলো অনেকটা এরকম–
বাউলদের বাংলাদেশ
মাইজভান্ডারির বাংলাদেশ
সুফি-সাধকের বাংলাদেশ
মাঝারের বাংলাদেশ……
বাউলরা যে জীবনাচারে অভ্যস্ত তা যদি আদর্শ হয় তাহলে মানুষকে আর কোন কিছু করতে হবেনা। শুধু গাঁজা খাও, নেশা করো, নষ্টামি করো এসবই হবে জীবন। যারা বাউল জীবনের পক্ষে বলে তারা তাদের ছেলে-মেয়েকে সেই বাউলের আস্তানায় পাঠাক। তারপর বাউল জীবনকে আদর্শ মানে কিনা বুঝা যাবে…
বাউলদের যারা উচ্ছিষ্ট গোঁফ দাড়ি কেটে দিয়েছেন সে সকল স্থানীয়দের সাক্ষাৎকার আমরা টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখেছি। তাদের কথায়ও বোঝা গিয়েছে; এটা একটি স্বাভাবিক সামাজিক প্রতিরোধ। এখানে কোন মতাদর্শ বা রাজনৈতিক চিন্তা কাজ করেনি। স্থানীয় সমাজের মাতুব্বর, বয়জেষ্ঠগণ, মসজিদের ইমাম, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি সবাই একত্রিত হয়ে বিনা প্ররোচনায় এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। পরবর্তীতে আমাদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক মনোভাব এই ঘটনা থেকে যে যার মত ফায়দা লুটতে উঠে পড়ে লেগেছে।
আমরা সম্প্রতি আওয়ামী নেতাকমী কর্তৃক বাউলদের চুলদাড়ি কেটে নেয়ার ঘটনা শুনেছি। অনেকে বিষয়টি নিয়ে বাঙালি সংস্কৃতি গেল গেল বলে রব তুলেছেন। কিন্তু আমরা কি জানি বাউলতত্ত্ব কী? বা এতে কী বলা রয়েছে? আমরা কিন্তু জানি না। আনুশেহ, সুমীর মতো কিছু অধুনা গায়িকা বাউলতত্ত্বের প্রচারপ্রসারে উঠেপড়ে লেগেছে। প্রসেনজিৎ এসে কয়েকদিন আগে লালন নিয়ে সিনেমা করে গেল। মূলত ইন্ডিয়াপন্থী কিছু বুদ্ধিজীবীর লালনপ্রেম যে উথলে উঠেছে তা আমাদের ভাবনার বিষয়। তারচেয়ে বড় কথা আমরা জানি না লালন আসলে কে? তার ধর্ম আসলে কি? এই প্রশ্নের জবাব দিবে নিন্মোক্ত লেখাটি
লালন ছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের গুরু। আমরা কি জানি কারা এই বাউল সম্প্রদায়? কি তাদের ধর্মবিশ্বাস ও জীবনাচরণ? নব্বই ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সাথে লালন ফকির বা বাউল সম্প্রদায়ের আচার-আচরণ, বিশ্বাস ও মূ্ল্যবোধ আসলে কতটুকু সম্পর্কিত? সর্বোপরি যারা বাউল সংস্কৃতিকে বাঙ্গালীর সংস্কৃতি বলে ১২ কোটি মুসলিমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে তাদের এসব কর্মকান্ডের উদ্দেশ্যই বা কি?
বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে যারা পড়াশোনা করেছেন তাদের কাছে প্রয়াত লেখক আহমদ শরীফের “বাউল তত্ত্ব” এবং লালন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডক্টর আনোয়ারুল করিমের “বাংলাদেশের বাউল- সমাজ, সাহিত্য ও সংগীত” নামের বই দুটো খুবই পরিচিত। বাউল শব্দটির উৎস ও এই সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে ডক্টর আনোয়ারুল করিম তার বাংলাদেশের বাউল বইতে যা লিখেছেন তার সারাংশ হল, প্রাচীন প্যালেস্টাইন এর রাসসামরায় বা’আল নামের একজন প্রজনন দেবতার উপাসনা করা হতো। তৌরাত, ইঞ্জিল(বাইবেল), কোরান মজিদসহ সকল ধর্মগ্রন্থেই এই দেবতাকে তীব্র নিন্দা করা হয়েছে এবং তার উপাসনা থেকে সকলকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত বা’আল প্রজনন-দেবতা হওয়ায় মৈথুন বা যৌনাচার এই ধর্মের অঙ্গীভূত হয়ে পড়ে। এই বা’আল ধর্ম এক্সময় এ উপমদেশীয় অঞ্চলেও ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে এ অঞ্চলে ইসলামের সুফীবাদী মতবাদের প্রচার-প্রসার ঘটার পর সম্ভবত ইসলাম ও পৌত্তলিকতা উভয় মতবাদের সংমিশ্রণে একটি নতুন লোকধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল যার উপরিভাগে ছিল মুসলিম সূফীবাদের প্রাধান্য, অভ্যন্তরে ছিল তন্ত্র ও যোগনির্ভর দেহজ সাধনা। তাই তার ধারণা মতে কালক্রমে এই বা’আল লোকধর্মই পরবর্তীতে বাউল লোকধর্মে পরিণত হয়েছে এবং লোকনিরুক্তি অনুসারে বাউল শব্দটি বা’আল>বাওল>বাউল এভাবে পরিবর্তিত হয়ে এসেছে। (বা.বা পৃষ্ঠা ১৩৩-১৪৫) ডা. আহমদ শরীফ তার “বাউলতত্ত্ব” বইটিতে বাউল ধর্মমত সম্পর্কে বলেন, “ব্রাহ্মণ্য, শৈব ও বৌদ্ধ সহজিয়া মতের সমবায়ে গড়ে উথেছে একটি মিশ্রমত যার নাম নাথপন্থ। …দেহতাত্ত্বিক সাধনাই এদের লক্ষ্য। (নাথপ্নথ এবং সহজিয়া) এ দুটো সম্প্রদায়ের লোক একসময় ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়, কিন্তু পুরনো বিশ্বাস-সংস্কার বর্জন করা সম্ভব হয়নি বলেই ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মের আওতায় থেকেও এরা পুরনো প্রথায় ধর্ম সাধনা করে চলে, তার ফলেই হিন্দু-মুসলমানের মিলিত বাউল মতের উদ্ভব। তাই হিন্দু গুরুর মুসলিম সাগরেদ বা মুসলিম গুরুর হিন্দু সাগরেদ গ্রহণে কোন বাধা নেই। তারা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও শরিয়তী ইসলামের বেড়া ভেঙে নিজের মনের মত করে পথ তৈরি করে নিয়েছে। এজন্য তারা বলে,
“কালী কৃষ্ণ গড খোদা/কোন নামে নাহি বাধা
মন কালী কৃষ্ণ গড খোদা বলো রে।” (বাউলতত্ত্ব পৃঃ ৫৩-৫৪)।
সাধারণ জনারণ্যে বাউলরা নাড়ার ফকির নামে পরিচিত। ‘নাড়া’ শব্দটির অর্থ হল শাখাহীন অর্থাৎ এদের কোন সন্তান হয়না। তারা নিজেদের হিন্দু মুসলমান কোনকিছু বলেই পরিচয় দেয়না। লালন শাহ ছিলেন বাউলদের গুরু। লালনকে বাউলরা দেবতা জ্ঞানে পূজা করে। তাই তার ‘ওরসে’ তাদের আগমন এবং ভক্তি অর্পণ বাউলদের ধর্মের অঙ্গ। (বা.বা পৃঃ ১৪) লালন শাহের অনুসারীদের একটি অংশ ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একজন মুসলমান অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “আমরা বাউল। আমাদের ধর্ম আলাদা। আমরা না-মুসলমান, না-হিন্দু। আমাদের নবী সাঁইজি লালন শাহ। তাঁর গান আমাদের ধর্মীয় শ্লোক। সাঁইজির মাজার আমাদের তীর্থভূমি।।…আমাদের গুরুই আমাদের রাসুল। …ডক্টর সাহেব [অর্থাৎ উক্ত মুসলিম অধ্যাপক] আমাদের তীর্থভূমিতে ঢুকে আমাদের ধর্মীয় কাজে বাধা দেন। কোরান তেলাওয়াত করেন, ইসলামের কথা বলেন… এ সবই আমাদের তীর্থভূমিতে আপত্তিকর। আমরা আলাদা একটি জাতি, আমাদের কালেমাও আলাদা –লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু লালন রাসুলুল্লাহ।“ (দ্রঃ সুধীর চক্রবর্তী, ব্রাত্য লোকায়ত লালন, ২য় সংস্করণ, আগস্ট ১৯৯৮ পৃঃ ৪-৯৫)
বাউল সাধনায় গুরুশ্রেষ্ঠকে ‘সাঁই’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সাধনসঙ্গিনীকেও গুরু নামে অভিহিত করা হয়। মূলত সাধনসঙ্গিনীর সক্রিয় সাহায্য ব্যতীত সাধনায় সিদ্ধী লাভ করা যায় না। তাই তাকে ‘চেতন গুরু’ বলা হয়। বাউলরা বিশ্বাস করে গুরুর কোন মৃত্যু নেই। তিনি কেবল দেহরক্ষা করতে পারেন। তিনি চিরঞ্জীবী। বাউলরা মন্দিরে কিংবা মসজিদে যায়না। জুম্মার নামায, ঈদ এবং রোযাও পালন করেনা। তারা তাদের সঙ্গিনীকে জায়নামাজ নামে অভিহিত করে। বাউলরা মৃতদেহকে পোড়ায়না। এদের জানাজাও হয়না। হিন্দু মুসলমান নামের সব বাউলদের মধ্যেই এই রীতি। এরা সামাজিক বিবাহ বন্ধনকেও অস্বীকার করে। নারী-পুরুষের একত্রে অবাধ মেলামেশা এবং বসবাসকে দর্শন হিসেবে অনুসরণ করে। (বা.বা পৃঃ ১৫-১৭)
বাউল সাধনা মূলত একটি আধ্যাত্বসাধনা, তবে যৌনাচার এই সাধনার অপরিহার্য অঙ্গ। ড. আহমদ শরীফের ভাষায় কামাচার বা মিথুনাত্বক যোগসাধনাই বাউল পদ্ধতি। বাউল সাধনায় পরকীয়া প্রেম এবং গাঁজা সেবন প্রচলিত। বাউলরা বিশ্বাস করে যে, কুমারী মেয়ের রজঃপান করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধক তৈরী হয়। তাই বাউলদের মধ্যে রজঃপান একটি সাধারন ঘটনা। এছাড়া, তারা রোগমুক্তির জন্য স্বীয় মুত্র ও স্তনদুগ্ধ পান করে। সর্বরোগ থেকে মুক্তির জন্য তারা মল, মুত্র, রজঃ ও বীর্য মিশ্রণে প্রেমভাজা নামক একপ্রকার পদার্থ তৈরি করে তা ভক্ষণ করে। একজন বাউলের একাধিক সেবাদাসী থাকে। এদের অধিকাংশই কমবয়সী মেয়ে। (বা.বা পৃ ৩৫০, ৩৮২)
এদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকায়, অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিমও ধর্মবিবর্জিত বিকৃত যৌনাচারী মুসলিম নামধারী বাউলদেরকে সূফী-সাধকের মর্যাদায় বসিয়েছে। মূলতঃ বিকৃত যৌনাচারে অভ্যস্ত ভেকধারী এসব বাউলরা তাদের বিকৃত ও কুৎসিত জীবনাচারণকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখার জন্য বিভিন্ন গানে মোকাম, মঞ্জিল, আল্লাহ, রাসূল, আনল হক, আদম-হাওয়া, মুহাম্মদ-খাদিজাসহ বিভিন্ন আরবী পরিভাষা, আরবী হরফ ও বাংলা শব্দ প্রতীকরূপে ইচ্ছাকৃতভাবেই ব্যবহার করেছে। এদেশে বহুল প্রচলিত একটি লালন সঙ্গীত হলো,
“বাড়ির পাশে আরশি নগর/সেথা এক পড়শী বসত করে,
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”
এই গানটিকে আমাদের সমাজে খুবই উচ্চমার্গের আধ্যাতিক গান মনে করা হলেও, এটি মূলত একটি নিছক যৌনাচারমূলক গান, যাতে আরশিনগর, পড়শী শব্দগুলো প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তাদের বিকৃত জীবনাচারকে গোপন রাখার উদ্দেশ্যে। (বা.বা পৃঃ ৩৬৮-৩৬৯)
বাউল সাধকরা বস্তুতঃ নিরাকার আল্লাহকে সাকারত্ব প্রদান করে তাদের অনুসারীদের পৌত্তলিকতার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এরা সাধারন মানুষের সারল্য, অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কারণে তাদের বিভ্রান্ত করেছে এবং এইসব বিকৃত সাধনাসম্বলিত লোকধর্ম আসলে আমাদের সমাজ জীবনকে ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সমাজ জীবনে বাউল লোকধর্মের এই ভয়ঙ্কর প্রভাব লক্ষ্য করে বাংলা ১৩৩৩ সালে হাজী মৌলভী রেয়াজউদ্দীন আহমদ “বাউল ধ্বংশ ফতওয়া” নামে বাউলবিরধী একটি বই লেখেন। যেখানে তিনি এই বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইসলাম, ইসলামী আকিদাহ্ যা এদেশের আপামর মুসলিমের অন্তর্নিহিত বিশ্বাসের সাথে বাউল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাসের দূরতম সম্পর্ক নেই এবং তা পুরোপুরি ষাংঘর্ষিক। শুধু তাই নয়, বিশ্বাসে পৌত্তলিক, আচার-আচরণে ভয়ঙ্কর কুসংস্কারাচ্ছন্ন, বিকৃত জীবানাচারণ ও অবাধ যৌনাচারে অভ্যস্ত বাউল সম্প্রদায় কোনভাবেই এদেশের মানুষের কৃষ্টি-কালচার বা আত্বপরিচিতির বন্ধনমূল হতে পারেনা। কবীর চৌধুরী, হামিদা হোসেন, আয়েশা খানম এবং তাদের অনুসারীরা বস্তুতঃ প্রগতিশীলতা, আধুনিকতা ও দেশীয় কৃষ্টি-কালচারের নামে, ফুল-পাখি-গান-কবিতা-সৌন্দর্য ইত্যাদির উছিলায় এদেশের মানুষকে অশ্লীল, বিকৃত ও নৈতিক মূল্যবোধ বিবর্জিত এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারাচ্ছন্ন জগতের দিকে নিয়ে যেতে চায়। যে নিকষ কালো আঁধারের মূলে রয়েছে বস্তুবাদ, ভোগবাদ ও চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতা এবং শেষপ্রান্তে অপেক্ষা করছে নিশ্চিত ধ্বংস। স্বনামধন্য লেখক হুমাইয়ূন আহমেদ, সাঁইজির মূর্তি ভাঙায় যার অন্তরে হাহাকার উঠেছে, তার বিতর্কিত ব্যক্তিজীবনই আমাদের বলে দেয় এই হাহাকারের উৎস কোথায়। এছাড়া, রোবায়েত ফেরদৌসের মত ব্যক্তি, যারা কিনা এদেশের তরুন-তরুনীদের বিয়ের আগেই শারীরিক সম্পর্ক তৈরীর ফ্রি লাইসেন্স দিতে চায় তাদের তো বল্গাহীন উদ্দাম বাউলিয়া জীবনাচারণই কাম্য।
তবে, একই সাথে এটাও ঠিক যে, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা পরধর্ম মতে সহনশীল। যদিও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের তাঁবেদার বুদ্ধিজীবী সুশীল সমাজের একটি অংশ মাঝে মাঝেই এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কল্পিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভি্যোগ এনে থাকেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো, ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল ভারতের মতো এদেশের মানুষ কখনোই সংখ্যালঘুদের উপর বর্বরভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে না, অন্য ধর্ম বা মতে বিশ্বাসী মানুষদের জীনন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে না, কিংবা তাদের ঘরবাড়ী, উপাসনালয়ও জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়না। তাই, যদি হামিদা হোসেন এবং কবীর চৌধুরীর অনুসারীরা বাউল ধর্মকে তাদের নিজস্ব ধর্ম বা সংস্কৃতি বলে মানতে চায় কিংবা শ্রীকৃষ্ণের অবতারে বিশ্বাসী লালন ফকিরকে তাদের দেবতা বলে ঘোষণা তবে, তবে নিঃসন্দেহে তাদের কেউ বাধা দেবে না। তারা যদি নিজেদের অর্থ-সম্পদ খরচ করে তাদের অধিকৃত জায়গায় আকাসছোঁইয়া লালনমূর্তি বানাতে চায়, তাতেও হয়তো কেউ কোন আপত্তি করবে না। কিন্তু জাতীয় বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, হাজী ক্যাম্পের সামনে জনগণের অর্থ ব্যয় করে লালনমূর্তি তৈরী বা বিমানবন্দরের সামনের চত্বরকে ‘লালন চত্বর’ ঘোষণার দাবী একেবারেই অযৌক্তিক। কারণ, তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন বিশ্বাস বা বিকৃত মূল্যবোধকে জাতীয় কৃষ্টি-কালচার হিসেবে সমস্ত জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কোন অধিকার তাদের নেই।





সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে?


http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে? - See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে? - See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে? - See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে? - See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে? - See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে? - See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে? - See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে? - See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে? - See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে? - See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf
সুতরাং আমরা বুঝলাম কেন এই লালন মচ্ছব। এ তো আমাদের ইসলাম নয়! এ হল কৃষ্ণের ১৬ হাজার গোপী নিয়ে কামক্রীড়ার বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। এদের হাত ধরেই নববর্ষে মুসলমান ছেলেদের পরনে ধুতি উঠেছে, মেয়েদের কপালে এসেছে সিঁদুর। আমরা যদি আজ ঘুমিয়ে থাকি, কাল কে আমাদের বাচাবে লালনধর্মের কুৎসিত অন্ধকার জগৎ হতে? - See more at: http://blog.bdnews24.com/Habibb/14103#sthash.eUSi1NOR.dpuf

বাউল দর্শনঃ একটি স্বতন্ত্র ধর্ম.

সত্যানুসন্ধানী সুমন wrote a new note: বাউল দর্শনঃ একটি স্বতন্ত্র ধর্ম.
বাউল গুরু ও তাদের অনুসারীদের নাম দেখে অনেকেই হয়ত মনে করেন তারা মুসলিম (বা হিন্দু)।আসলে কিন্তু তা নয়।বাউল দর্শন একটি আলাদা ধর্ম।
আসলে বাউল দর্শন হচ্ছে বৈষ্ণবধর্ম ও সুফীবাদের জগাখিচুরি।






বাউল শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে মতান্তর রয়েছে। কেউ বলেন ‘বাতুল’ থেকে ‘বাউল’ হয়েছে, কারো মতে ‘বজ্রী’ থেকে কিংবা ‘বজ্রকুল’ থেকে বাউল শব্দটি এসেছে। কেউ কেউ বলেন ‘আউল’ শব্দ থেকে ‘বাউল হয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে, সতেরো শতকে বাংলাদেশে বাউল মতের উদ্ভব হয়। এ মতের প্রবর্তক হলেন আউল চাঁদ ও মাধববিবি। বীরভদ্র নামে এক বৈষ্ণব মহাজন সেই সময়ে একে জনপ্রিয় করে তোলেন।
বাউলদর্শনের মুল ভিত্তি হচ্ছে দেহতত্ত্ব। দেহকে বাউলগণ পরম সম্পদ বলে মনে করেন। তাদের সাধনার মূল হল এই মানব দেহ। তাদের মতে মানব দেহের মধ্যেই আল্লাহ বা ভগবান বিরাজমান। মানব দেহকে আশ্রয় করে সাধন-ভজন করে মনের মানুষকে উপলব্ধি করাই তাদের আধ্যাত্মিক লক্ষ্য। বাউলরা মনে করেন বিশ্ব স্রষ্টা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার সমসত্মই এই মানব দেহে বিদ্যমান আছে। সুতরাং তাদের মতানুসারে ঈশ্বরকে খোঁজার জন্য দেহের বাইরে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

বাউল সাধকদের সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন লালন সাঁই। লালন তার বিপুল সংখ্যক গানের মাধ্যমে বাউল মতের দর্শন এবং অসাম্প্রদায়িকতার প্রচার করেছিলেন। এছাড়াও বাউল কবিদের মধ্যে জালাল খাঁ, রশিদ উদ্দিন, হাছন রাজা, রাধারমণ, সিরাজ সাঁই, পাঞ্জু সাঁই, পাগলা কানাই, শীতলং সাঁই, দ্বিজদাস, হরিচরণ আচার্য, মনোমোহন দত্ত, লাল মাসুদ, সুলা গাইন, বিজয় নারায়ণ আচার্য, দীন শরৎ (শরৎচন্দ্র নাথ), রামু মালি, রামগতি শীল, মুকুন্দ দাস, আরকুন শাহ্‌, সিতালং ফকির, সৈয়দ শাহ্‌ নূর, শাহ আব্দুল করিম, উকিল মুন্সি, চান খাঁ পাঠান, তৈয়ব আলী, মিরাজ আলী, দুলু খাঁ, আবেদ আলী, উমেদ আলী, আবদুল মজিদ তালুকদার, আবদুস সাত্তার, খেলু মিয়া, ইদ্রিস মিয়া, আলী হোসেন সরকার, চান মিয়া, জামসেদ উদ্দিন, গুল মাহমুদ, প্রভাত সূত্রধর, আবদুল হেকিম সরকার, ক্বারী আমির উদ্দিন, শেখ মদন, দুদ্দু সাঁই,কবি জয়দেব, কবিয়াল বিজয়সরকার, ভবা পাগলা, নীলকণ্ঠ, দ্বিজ মহিন, পূর্ণদাস বাউল, খোরশেদ মিয়া, মিরাজ উদ্দিন পাঠান, আব্দুল হাকিম, মহিলা কবি আনোয়ারা বেগম ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য।
বাউলরা যে হিন্দু বা মুসলিম নয় তা লালন তার গানে বলে গেছেনঃ
সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না এই নজরে।।
কেউ মালায় কেউ তসবি গলায়,
তাইতে যে জাত ভিন্ন বলায়।
যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়,
জাতের চিহ্ন রয় কার রে।।
যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান,
নারীর তবে কি হয় বিধান?
বামন চিনি পৈতা প্রমাণ,
বামনী চিনি কিসে রে........
বাউল সাধনা খুবই নোংরা ও অসামাজিক। যৌনাচার এই সাধনার অপরিহার্য অঙ্গ। ড. আহমদ শরীফের ভাষায় কামাচার বা মিথুনাত্বক যোগসাধনাই বাউল পদ্ধতি। বাউল সাধনায় পরকীয়া প্রেম এবং গাঁজা সেবন প্রচলিত। বাউলরা বিশ্বাস করে যে, কুমারী মেয়ের রজঃপান করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধক তৈরী হয়। তাই বাউলদের মধ্যে রজঃপান একটি সাধারন ঘটনা। এছাড়া, তারা রোগমুক্তির জন্য স্বীয় মুত্র ও স্তনদুগ্ধ পান করে। সর্বরোগ থেকে মুক্তির জন্য তারা মল, মুত্র, রজঃ ও বীর্য মিশ্রণে প্রেমভাজা নামক একপ্রকার পদার্থ তৈরি করে তা ভক্ষণ করে। একজন বাউলের একাধিক সেবাদাসী থাকে। এদের অধিকাংশই কমবয়সী মেয়ে। (বা.বা পৃ ৩৫০, ৩৮২)
‪#‎নাস্তিকরা‬ নিজেদের বিজ্ঞানমনস্ক পরিচয় দিলেও এইরকম নোংরা মতবাদকে প্রমোট করে থাকে।আসলে এটি মানুষকে ধর্ম থেকে দূরে সরানোর একটি ভয়ংকর কৌশল।অধিকাংশ বাউল সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে, কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে তাদের ধারণা অস্পষ্ট। আবার নাস্তিকরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়।কিন্তু একটি জায়গায় উভয়ের দারুন মিল।তা হল- ধর্মীয় আচার ও আনুষ্টানিকতার ঘোর বিরোধী তারা। যেহেতু আমাদের দেশের মুসলিম প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ তাই নাস্তিকরা এই মতবাদকে প্রমোট করে প্রথমে আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে সংশয়ে ফেলে, অতঃপর ধীরে ধীরে ধর্মকর্ম থেকে দুরে সরায়।আর একটি বিষয় হলো এই মতবাদ দ্বারা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফ্রি সেক্সের বিজ্ঞাপন করা যায়।
এই চক্রান্ত থেকে মুসলিমদের রক্ষা করার জন্য কুরআন ও সহীহ হাদীছের অধিক ও প্রচার ও আল্লাহর নিকট অধিক সাহায্য চাওয়ার বিকল্প নেই।আসুন সবাই নাস্তিক ও বাউলদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ঈমানের উপর দৃঢ় রাখুন।আমীন।
(শেয়ার ও কপি করা যাবে)